তসলিমারা যেভাবে মৌলবাদ চর্চা করে
আমি ছোটবেলা থেকে ধর্মীয় পরিবেশে বড় হয়েছি।খুব ছোটকাল থেকে নামায পড়তাম।আমি ছোটকালে কোরআন পড়া শিখেছি। তবে আমার পরিবার কখনো ধর্ম পালন করতে প্রেসার দেয় নি।যতটুকু করেছি নিজের ইচ্ছায়। ধর্মীয় বই যতোটা না পড়েছি তার চেয়ে বেশি শুনেছি ওয়াজ মাহফিল।এভাবে বেড়ে ওঠা।যখন আমি জ্ঞান অর্জনের জন্য বেশি বেশি বই পড়তে শুরু করলাম তখন আমার অজ্ঞতা দূর হতে থাকলো।ধর্ম সম্পর্কে আমার মনে প্রশ্ন তৈরি হলো।আমি সবগুলো প্রশ্নের উত্তর পেলাম না।দেখলাম বাংলাদেশের হুজুর মাওলানাদের কেউ কেউ ধর্ম নিয়ে লোক হাসানো কথা বলছে।যে কথাটা খুবই সাধারণভাবে মানুষকে বোঝানো যায় তা উত্তেজিত হয়ে বলছে।মন গড়া ভিত্তিহীন, ইউটিউব থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওয়াজ করছে।এসব অবৈজ্ঞানিক, বাছ-বিচারহীন কথায় তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা চলে গেল।সাথে ধর্মের প্রতিও। আমি দেখলাম নামায পড়ে এসে বউ পেটায়।নামায পড়া মহিলারা ঝগড় করে।আমি দেখলাম মসজিদের ইমাম তাবিজের ব্যবসা করে।ধর্মে বিশ্বাস করেও অন্যায় করে।জানে পরকালে বিচার হবে তবুও পাপ কাজ করে।এক টুপিওয়ালা আরেক টুপিওয়ালাকে দেখতে পারে না।শুধু যে অন্য ধর্মের প্রতি এদের বিদ্বেষ তা নয় নিজেদেরকে নিজেরা ঘৃনা করে।
অবশেষে আমি নাস্তিক হয়ে গেলাম।
নাস্তিকতার জগতে এসে আমি একই জিনিস দেখতে পেলাম। যদিও আমি কখনো কোনো নাস্তিককে চিনি না। কিন্তু তাদের লেখাগুলো পড়তে শুরু করলাম।
দেখলাম এরা ধার্মিকদের বিপরীত রুপ।আদর্শ ভিন্ন হলেও মানসিকতা এক।নাস্তিকরা নিজেদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ ভাবে। ধর্ম বিষয়ে প্রশ্ন করলে যেমন আস্তিকরা রেগে গিয়ে নাস্তিক, ধর্মবিদ্বেষী বলে,গালি দেয়,তেড়ে আসে মারতে।নাস্তিকদের কোন কিছুতে বিরোধিতা করলে তারাও মৌলবাদী বলে গালি দেয়।নাস্তিকরা যা বলে তাই নাকি বিজ্ঞান, অথচ আমি তাদের কথায় রাজনীতি, দর্শন, সমাজ আর ধর্মবিরোধিতা ছাড়া তেমন কিছু খুঁজে পায় নি।আস্তিকরা যেমন চায় সবাই ধর্মে ফিরে আসুক এবং তারা যে ধর্ম পালন করছে সবাই তা করুক। নাস্তিক লোকেরাও একই কথা বলে।সবাই নাস্তিক হয়ে যাক।নাস্তিকরা ধর্মকে নিষিদ্ধ করতে চায় আবার ধার্মিকরা নাস্তিকতা নিষিদ্ধ করতে চায়।আমি এবার নাস্তিকতা ত্যাগ করে অজ্ঞেয়বাদী হয়ে গেলাম। কারণ সৃষ্টিকর্ত আছে কি নেই তা প্রমাণ করা সম্ভব নয়।
আবার ধর্মীয় মৌলবাদ যেমন সমস্যা ধর্মবিদ্বেষী মৌলবাদও একটি সমস্যা।
নাস্তিকরাও মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক
আমরা সাধারণত গোড়া ধার্মিকদের মৌলবাদী বলি।কিন্তু গোড়া নাস্তিকদের? এরাও মৌলবাদী। এরা বলে সবার বাকস্বাধীনতা থাকতে হবে।মুক্ত চিন্তা করার অধিকার থাকতে হবে। আমিও মনে করি তাদের তা থাকা উচিত।
কিন্তু দেখুন তসলিমা নাসরিনকে।তিনি হজ্জ, রোযা ও কোরবানি সম্পর্কে বেশ সমালোচনা করেন। তিনিই করতেই পারেন। কিন্তু পৃথিবীতে এমন কোন আদর্শ কি তিনি দেখাতে পারবেন যেটা নিয়ে সমালোচনা করা যায় না।তিনি কি আর্যদের ইতিহাস পড়েন নি?কীভাবে আর্যরা আদিম জনগোষ্ঠীর উপর নির্যাতন করেছিল?তিনি তার এক লেখায় বলেছিলেন আজানে পরিবেশ দূষণ হয়।তাই প্রকাশ্যে আজান নিষিদ্ধ হওয়া দরকার। এখন একজন মৌলবাদী আস্তিক যদি বলে প্রকাশ্যে গান-বাজনা বন্ধ হওয়া দরকার।এতেও পরিবেশ দূষণ হয়।তসলিমা নাসরিন বলেছেন, রাস্তা-ঘাটে, হাঁটে বাজারে নামায নিষিদ্ধ হওয়া দরকার। এখন যদি মৌলবাদী আস্তিক বলে,প্রকাশ্যে নাস্তিকতা চর্চা বন্ধ হওয়া দরকার।
মালালা ইউসুফ যখন বিয়ে করলেন তাতে তসলিমা বিরোধিতা করেছিল। আবার সুস্মিতা সেন যখন ললিত মোদীকে বিয়ে করতে চাইলো তখনো তসলিমা বিরোধিতা করলো।তসলিমারা ব্যাক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে অথচ অন্য নারীদের স্বাধীনতা দিতে চাইনা।সবকিছু যেন তসলিমার পছন্দে হতে হবে। টি শার্ট পরা অর্থাৎ যেকোনো পোশাক পরা যেহেতু নারী-পুরুষের অধিকার তাহলে বোরকা কারর অধিকার হবে না কেন?
মৌলবাদী আস্তিকেরা ক্ষমতা পেলে যেমন ভিন্ন চিন্তার লোকেরা কোণঠাসা হয়ে যাবে তেমনি তসলিমারা ক্ষমতা পেলে ঠিক একই কাজ করবে।
উনারা সিলেকটিভ একটিভিজমে বিশ্বাস করে।নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ও একটি বিশেষ ধর্ম সম্পর্কে সমালোচনা করে।এই নীতি খারাপ। উনারা মানুষের মন বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন।কেন মানুষ সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে বুঝতে পারছেন না।কেন মানুষ তার জীবনের একটা সময় এসে ধার্মিক হয়ে যায় তা তারা বুঝতে অক্ষম। সবকিছুতে ধর্মের দোষ খুঁজে বেড়ানো বোকামি। অর্থনৈতিক সমস্যা, পারিবারিক সমস্য,স্থান,কাল,পাত্রভেদে সামাজিক সমস্যাকেও তা ধর্মীয় সমস্যা বলে চালিয়ে দেন।
তাহলে বলুন শুধু কি ধার্মিকরা মৌলবাদী আর সাম্প্রদায়িক হয় নাকি নাস্তিকেরাও মৌলবাদী হয়?
পৃথিবীতে কখনো শান্তি ছিল না আর শান্তি আসবেও না।কোন আদর্শ শান্তি আনতে পারবে না। না আস্তিক না নাস্তিক, কেউ শান্তি আনতে পারবে না।কারণ তারা উভয় মৌলবাদী আর সাম্প্রদায়িক। গোড়া নাস্তিক আর গোড়া আস্তিুক উভয়ই একই গোয়ালঘরে বসত করে।
যাইহোক শেষে বলতে চায়, বাংলাদেশতো তারও দেশ।একটি স্বাধীন দেশ থেকে কাউকে এভাবে তাড়ানো যায় না।তবে তিনিও একজন মৌলবাদী
সত্যি কথা বলতে আমি তসলিমাকে মৌলবাদী মনে করলেও তাকে আমার ভালো লাগে।উনি ইসলামের দোষ বেশি খোঁজেন এতে উনি উনার চিন্তার নিরপেক্ষতা হারান ঠিক।তবে একজন নারী রক্ষণশীল পরিবেশ থেকে বের হয়ে, দেশান্তরী হয়ে মত প্রকাশ করছে।এটা অবশ্যই প্রশংসার।
0 Comments