চুয়াডাঙ্গার ভাষা
চুয়াডাঙ্গা সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি। বাংলাদেশের ছোট্ট একটি জেলা চুয়াডাঙ্গা। ব্রিটিশ ভারতে চুয়াডাঙ্গা ছিল নদীয়ার অন্তর্ভুক্ত। চুয়াডাঙ্গা সম্পর্কে আরো জানতে পারেন
চুয়াডাঙ্গার আদি ইতিহাস
গ্রীক ঐতিহাসিকদের মতে এ এলাকাতেই বিখ্যাত গঙ্গারিডাই রাজ্য অবস্থিত ছিল। গাঙ্গেয় নামক একটি শহরও এ চুয়াডাঙ্গায় অবস্থিত ছিল বলে শোনা যায়। চুয়াডাঙ্গার নামকরণ সম্পর্কে কথিত আছে যে, এখানকার মল্লিক বংশের আদিপুরুষ চুঙ্গো মল্লিকের নামে এ জায়গার নাম চুয়াডাঙ্গা হয়েছে। ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে চুঙ্গো মল্লিক তাঁর স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ভারতের নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার সীমানার ইটেবাড়ি- মহারাজপুর গ্রাম থেকে মাথাভাঙ্গা নদীপথে এখানে এসে প্রথম বসতি গড়েন। ১৭৯৭ সালের এক রেকর্ডে এ জায়গার নাম চুঙ্গোডাঙ্গা উল্লেখ রয়েছে। ফারসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করার সময় উচ্চারণের বিকৃতির কারণে বর্তমান চুয়াডাঙ্গা নামটা এসেছে। চুয়াডাঙ্গা নামকরণের আরো দুটি সম্ভাব্য কারণ প্রচলিত আছে। চুয়া < চয়া চুয়াডাঙ্গা হয়েছে।। ব্রিটিশ শাসনামলে এ এলাকাটি বেশ কিছু আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল; যেমন: ওয়াহাবী আন্দোলন (১৮৩১), ফরায়েজি আন্দোলন (১৮৩৮-৪৭), সিপাহী বিদ্রোহ (১৮৫৭), নীল বিদ্রোহ (১৮৫৯-৬০),স্বদেশী আন্দোলন (১৯০৬), অসহযোগ আন্দোলন, সত্যাগ্রহ আন্দোলন (১৯২০-৪০), ভারত ছাড় আন্দোলন (১৯৪২) ইত্যাদি। ব্রিটিশ শাসনাধীনে চুয়াডাঙ্গা নদিয়া জেলার একটি উপজেলা ছিল। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময় কৃষ্ণনগর থানা (বর্তমানে নদিয়া জেলার অন্তর্গত) বাদে বাকি অংশ কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়।চুয়াডাঙ্গা জেলা বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। পূর্বে এটি বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্গত ছিল। দেশ বিভাগের পূর্বে এটি পশ্চিম বঙ্গের নদিয়া জেলার অন্তর্গত ছিল। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধের সর্বপ্রথম কমান্ড দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ড গঠিত হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায়। মুক্তিযুদ্ধের আট নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ছিল চুয়াডাঙ্গা সদরের ৪নং ইপিআর এর হেডকোয়ার্টার। ৪নং ইপিআর প্রধান মেজর আবু ওসমান চৌধুরী এবং ডাঃ আসহাব-উল-হক জোয়ার্দার। একই দিন সকাল ৯:৩০ এ চুয়াডাঙ্গা শহরের বড় বাজার চৌরাস্তার মোড়ে সর্বপ্রথম দখলদার পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ রেডক্রস বর্তমানে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি চুয়াডাঙ্গাতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের ডাক বিভাগ এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা এই চুয়াডাঙ্গায় প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১০ই এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার চুয়াডাঙ্গা কে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করেন। এবং ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত তা কার্যকর ছিলো। পরবর্তীতে নিরাপত্তার কথা ভেবে রাজধানী মেহেরপুরের বৌদ্দনাথ তলায় বর্তমানে মুজিবনগর এ সরিয়ে নেওয়া হয়। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর ব্রিটিশরা বাংলাদেশের প্রথম রেল পথ চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা থেকে কুষ্টিয়া জেলার জগতী পর্যন্ত চালু করেন। চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা রেলস্টেশন হল বাংলাদেশের প্রথম রেলস্টেশন।
চুয়াডাঙ্গা শহরের জনসংখ্যার ১০০% শিক্ষিত এবং সম্পূর্ণ উপজেলার শিক্ষার হার ৯৯% ।
নদ-নদী.
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় অনেকগুলো নদী রয়েছে। নদীগুলো হচ্ছে মাথাভাঙ্গা নদী , নবগঙ্গা নদী, চিত্রা নদী ও ভৈরব নদ।
আমরা চুয়াডাঙ্গার মানুষের ভাষা সম্পর্কে একটু জানবো।
আসলে চুয়াডাঙ্গার সব এলাকার মানুষের মুখের ভাষা এক নয়। তবে সুর, টান কথা বলার ধরন প্রায় এক।অনেক জায়গায় দেখা যায় পাশাপাশি দুটি গ্রাম অথচ কিছু কিছু শব্দ আলাদাভাবে উচ্চারণ করছে।
চলুন জেনে নেয়া যাক আঞ্চলিক কিছু শব্দ
ভূইজু= মুড়ি
মেকুর= বিড়াল
হাইশেল= রান্নাঘর
আকা= চূলা
ছুড়ান= চাবি
ছুড়া-ছুড়ি= ছেলে-মেয়ে
জলদি=তাড়াতাড়ি
পুঙা = পাছা
টাট্টিঘর (বয়স্ক লোকেরা বলে) = টয়লেট
কুল= বরই
হাগা= পায়খানা করা
কুষ্টা= পাট
খ্যাতা= কাঁথা
ভেন্ডি= ঢেঁড়শ
দুলছি= বালতি
হ্যারআয়= এখানে আসো
কুড়ি ট্যাকা= বিশ টাকা
দোপ= নিচু জায়গা
নমুনা:
দুই কৃষকের মাঝে কথোপকথন
চাচা এত রোদি মাটের মদ্দি কি কইরছু? আর বুলিসনি বাপু পাট লাগাছি দু বিগি।একুন জাগ দেব নি কোনে। পানিতো হচ্ছে না। চাচা আমুতো ঐ টেনশনে আচি।পুকুরি নি পানি,দোপের মাঠে পানি জইমতু একুনতো বৃষ্টি হচ্ছে না পানি আসপে কোনতি।ভাবছি দশ দিন পর পাট কাটপো।যদি আল্লা বৃষ্টি দেয়।তাই করতি হবেনে ভাস্তে।চলো বাড়ি যায়। আইজ আবার শুক্কুরবার। নামাজ পড়তি হবে।
No comments:
Post a Comment