ধর্মে বিশ্বাস করেও কেন আমরা অন্যায় করি?

ধর্মে বিশ্বাস থাকার পরও কেন মানুষ অন্যায় করে?

নামায পড়ে কপালে দাগ ফেলেছে অথচ ঘুষ খায়,গালি দেয়, মিথ্যা বলে।কেন এমনটা হয়? তাহলে নামায কি অর্থহীন।ধর্ম যদি অর্থহীন হয় তবে অর্থযুক্ত কোনটা? কোন কিছুতেই তো অন্যায়-অপরাধ নিশ্চিহ্ন করা যাচ্ছে না।আসলে নামায, রোযা,হজ্ব, যাকাত কিছু কিছু মানুষের কাছে শুধুমাত্র অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এগুলো করতে হবে তাই করে।কিন্তু এগুলো কেন করছি, এগুলোর গুরুত্ব কতটুকু তা তারা বুঝতে পারে না। ধর্ম শুধু বিশ্বাসের ব্যপার না।যারা ধর্মকে শুধু বিশ্বাসের মধ্যে রাখে তারা ধর্মে বিশ্বাস করেও অন্যায় করে।আবার ধর্ম শুধু প্র্যাকটিস বা অনুশীলনের ব্যাপার  না।যারা গুরুত্ব  না বুঝে, বা বিবেক দিয়ে চিন্তা না করে পথ চলে তারা নামায পরেও ঘুষ খায়।ধর্ম বিশ্বাস,অনুশীলন, উপলব্ধি, অনুধাবন, বিচার-বিশ্লেষন,বিবেক দিয়ে চিন্তা করার জিনিস। যারা এগুলো করে না তারা ধর্ম বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারে না।প্রতারণা করলে সৃষ্টিকর্তা শাস্তি দেবে এটা জেনেও কেন প্রতারণা করি? আসলে লোভ,দরকারবাদী মনোভাব, মনের উপর নিয়ন্ত্রণহীনতা, পরিবেশ একটি অদৃশ্য শক্তিশালী বলয় তৈরি করে।এই বলয় মানুষের বোধকে নিস্ক্রিয় না করতে পারলেও কিছু সময়ের জন্য বিবেক, মায়া-ভালবাসা,অনুভূতিকে ছাইচাপা দিয়ে রাখে।যখনই মানুষ এই অদৃশ্য বলয় থেকে বের হয়ে আসে তখন সে বুঝতে পারে অতীতের কাজগুলো করা উচিত হয় নি তার।অতীতের ভুল কাজের জন্য সে অনুতপ্ত হতে থাকে।মানুষ তার শেষ বয়স অর্থাৎ বৃদ্ধকালে বুঝতে পারে অতীতের কাজগুলো ভুল ছিল।তখন শেষ বয়সে এসে ধার্মিক বনে যায়।

শেষ বয়সে এসে মানুষ কেন এতোটা ধার্মিক হয়ে যায়?

কিশোর বয়সে বন্ধু বা খেলার সাথীর সংখ্যা থাকে বেশি।খেলতে খেলতে কেটে যায় সারাদিন। যুবক বয়সে, বন্ধু-বান্ধবের সাথে যুক্ত হয় প্রেম-আবেগ, চাকরি,কাজ-কর্ম, এরপর শুরু হয় বিবাহিত জীবন,সন্তান-সন্তুতি। অর্থ উপার্জন, অভাব-অনটন,কারর কারর জন্য মোহ-ফূর্তি,বিলাসিতা।এসব ব্যস্ততা মানুষের ন্যায়-অন্যায় বোধ সুপ্ত করে রাখে।এতোটা ব্যাস্ত রাখে যে  নিজেকে নিয়ে একান্তে-নির্জনে দশ মিনিট ভাবার সুযোগ দিতে চায় না।শেষ বয়সে এটার ঠিক উল্টোটা দেখা যায়।কারণ কাজ কমে যায়,শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে,ব্যাস্ততা কমে যায়,যৌন আকাঙ্ক্ষা লোপ পায়,মানুষ নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় পায়।মৃত্যু ভয় চারিদিকে ঘিরে ধরে।তৈরি হয় ভয়ের বলয়।আর একারণে শেষ বয়সে লোকে ধার্মিক হয়ে যায়।আযানের আগেই মসজিদে চলে যায়।হাতে থাকে তসবিহ। 


যারা ধর্মীয় পরিবেশে থাকে তারা কেন অন্যায় করে?

আগেই বলেছি শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুশীলন মানুষকে সৎ ও নীতিবান বানাতে পারে না। পারলে মাদ্রাসায় যে বলৎকার বা কিছু কিছু আলেমদের জনগণের সাথে প্রতারণা, টাকা নিয়েও ওয়াজ না করা,তাবিজ-কবজের ব্যবসা এগুলো করতো না।সবাইতো করছে না। কিছু কিছু লোকের কারণে আমরা সবাইকে দোষারোপ করতে পারি না।যারা ধর্মীয় পরিবেশে থাকার পরও অন্যায় করছে তারা মূলত লোভ-মোহ আর হিংসার জালে আটকা পড়ে আছে।তারা বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ নয়।অথবা এগুলো তাদের পুরোনো অভ্যাস যা তারা পরিবর্তনের চেষ্টা করেও পারে নি। ধর্মীয় লেবাস হয়ত তাদের ছদ্মবেশ যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে। এটাও হতে পারে যে তারা চিন্তা না করে কাজ করে। তবে আমরা দু'একজন ধর্মীয় লেবাসধারীর জন্য সবাইকে এক পাল্লায় ফেলতে পারি না।


তাহলে আমাদের কী করা উচিত? 

ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুশীলনের সাথে সাথে প্রতিটা কাজ করার পূর্বে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করা উচিত। আপনি একজন বৃদ্ধকে চড় দিলেন এটা যদি আপনার বাবার সাথেও ঘটে।আপনার চেয়ে ক্ষমতাবান কেউ আপনার বাবাকে থাপ্পড় দেয় তখন আপনার কেমন লাগবে।আপনি ঘুষ খান, কেউ যদি আপনার ছেলেকে ঘুষ খোরের ছেলে বলে তখন আপনার বা তার কেমন লাগবে? কখনো ভেবেছেন এই অর্থ-কড়ি কতদিন ভোগ করতে পারবেন?  মৃত্যু আর কতদিন বাকী? যারা এগুলো ভাবে।বিবেককে প্রশ্ন করে তারা কখনো অন্যায় করতে পারে না।তাই আমাদের ধর্মীয় চর্চার পাশাপাশি বিবেকের অনুশীলন করা উচিত। প্রতিদিন অন্তত একঘন্টা নিজেকে নিয়ে ভাবা উচিত।আত্মসমালোচনা করা ধর্মীয় কাজের অংশ।



Post a Comment

أحدث أقدم