নাস্তিকতা বনান আস্তিকতা 

ভেবেছিলাম ধর্ম-অধর্ম কোন কিছু নিয়ে আর লিখবো ন।শুধু বিজ্ঞান,ইতিহাস আর সাহিত্য নিয়ে লিখব।কিন্তু সমাজে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব এতোটা বেড়ে গেছে যে না লিখে আর পারছি না।

মানুষ যেভাবেই সৃষ্টি হোক সে আলোচনায় যাব না।ধর্মের ইতিহাস বহু পুরনো। খুব সম্ভবত মানুষ যখন নিজের অস্তিত্ব ও প্রকৃতি নিয়ে ভাবা শুরু করেছিল তখন থেকে সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাস মানুষের  মনে জন্ম নেয়। মানুষ যখন  মৃত নিকটাত্মীয়দের স্বপ্নে দেখা শুরু করলো তখন মানুষের মনে বিশ্বাস জন্মাতে শুরু করে যে আত্মা বলে কিছু একটা আছে। আফ্রিকার আদিবাসী গোষ্ঠী এখনো তাদের  পুরোনো বিশ্বাস ও কালচার ধরে রেখেছে।  তারা মেঘের দেবতাকে পূজা করে। এটা আদিকাল থেকে শুরু। কারণ  যখন মেঘের গর্জন হয় এই আদিবাসীরা ভাবে  মেঘ হয়ত কোনো কারণে তাদের উপর গোস্বা করেছে।


এবার মূল আলোচনায় আসা যাক। 

মানুষ কেন ধর্মে বিশ্বাস শুরু করলো?

১. যখন মানুষ নিজেকে ও প্রকৃতি নিয়ে ভাবা শুরু করলো অথচ কোন উত্তর খুঁজে পেল না।


২. অপূর্ণতা থেকে।যেমন মানুষ অভাবে পড়লে, আকাংখিত জিনিস সহজে না পেলে  সৃষ্টিকর্তাকে ডাকে।


৩. রোগে ভুগলে। আপনার অর্থ আছে সিংগাপুর গেলেন চিকিৎসা নিতে। যার নেই সে কি করবে? সৃষ্টিকর্তাকে ডাকা ছাড়া?


৪. মৃত্যু ভয়।ধীরে ধীরে মানুষের বয়স বাড়তে থাকলে মৃত্যু ভয় কাজ করে।তখন সে ভাবতে থাকে মৃত্যুর পর যদি সত্যি সৃষ্টিকর্তা থাকে!তাহলে? 


মানুষ কেন নাস্তিক হয়?

১. যখন কেউ সবকিছুকে স্বাভাবিক বলে মনে করে।সৃষ্টিকর্তা যদি  এমনি এমনি সৃষ্টি হয় তবে এই ইউনিভার্সটাও এমনি এমনি সৃষ্টি হতে পারে।


২. আস্তিকদের আচরণ দেখে।বিশেষ করে ধর্ম প্রচারক বা ধর্মযাজকদের আচরণের কারণে।অনেকে ধর্ম ছেড়ে দেয়।


৩. ধর্মের অপব্যাখ্যার কারণে।মানুষ ভুল বোঝে।তারপর ধর্ম ছাড়ে।

৪. ধর্মের কিছু  আইনের কারণে।হয়ত সেগুলো সেই সময়কার প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছিল, অথবা সেই সময়ের তা সহজ ছিল।

চলুন এবার জেনে নেয়া যাক
 কারা সঠিক? আস্তিকরা নাকি নাস্তিকরা?

কে সঠিক তা বলা মুশকিল। সৃষ্টিকর্তা আছে এটা যেমন  একটা বিশ্বাস। সৃষ্টিকর্তা নেই সেটাও একটা বিশ্বাস। এর কোনটাই বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত নয়। বিজ্ঞান চলে প্রামাণে বিশ্বাসে নয়।অথচ নাস্তিকরা তাদের বিশ্বাসকে বিজ্ঞান বলে চালিয়ে দিচ্ছে।  কিছু কারণে আমি নাস্তিক হয়ে যায়।যদিও আমার জানা-বোঝার কিছুটা ত্রুটি ছিল। তবে মনে মনে হয়েছিলাম।কারণ সমাজে থাকতে হলে ধর্মীয় অবিশ্বাস কিছুটা হলেও লুকাতে হয়। তাছাড়া আমারতো সমস্যা হচ্ছেনা। ধর্ম মানতাম না। কেউ জোরপূর্বক মানাতে বাধ্য করতো না। তো চুপ থাকায় ভালো।বরং বাড়াবাড়ি করলে সমাজে অশান্তি তৈরি হবে।

যেহেতু আমি নাস্তিক ছিলাম সেহেতু নাস্তিকদের লেখা পড়তাম।কিন্তু কারর সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি হয় নি।যাইহোক নাস্তিকদের মধ্যেও দেখি একই সমস্যা। আমি অবাক হলাম।তাহলে যাব কোথায়? 

কিছু আস্তিক যেমন মৌলবাদ সৃষ্টি করে।সবকিছুতে ধর্ম খোঁজে। ঠিক নাস্তিকরাও তাই।সব কিছুতে ধর্মের দোষ খোঁজে।তারা কাউকে মেনে নিতে পারেনা। অথচ নিজেদের মুক্তমনা বলে দাবী করে।

উভয় উভয়কে নিষিদ্ধ করতে চায়।দেখবেন আস্তিকদের প্রশ্ন করলে তারা রেগে যায় এবং নাস্তিক, দালাল বলে গালি দেয় তেমন নাস্তিকদের ক্ষেত্রেও একই। তারাও সমালোচনা সহ্য করতে পারে না।মৌলবাদী বলে গালি দেয়।

পোষ্টের কমেন্টগুলো তাদের বিরুদ্ধে গেলে  রেগে যায়।গালি দেয়। এই যে আচরণ তাতে আস্তিক মৌলবাদ ও নাস্তিক মৌলবাদের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পেলাম না।অন্যের সমালোচনা যদি আমি করতে পারি তবে নিজেকেও সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।  যারা নিজেদের বিশ্বাস  প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে অন্য আদর্শকে নিষিদ্ধ করতে চায় তারাই মূলত মৌলবাদী হয়ে উঠে। 

আর মৌলবাদ কখনো শান্তি আনতে পারে না।সে ধর্মীয় মৌলবাদ হোক বা অধর্মীয় মৌলবাদ।


যেহেতু আদর্শ, ধর্ম, রীতিনীতি  মানুষের তৈরি।তাই তাতে ভুল থাকবে, স্বার্থ থাকবে, স্বজনপ্রীতি থাকবে। সবগুলো আদর্শকে নিয়ে কিছু না কিছু সমালোচনা করা যায়। কিন্তু একটি ধর্ম বা একটি জাতির উপর এতোটা রাগ ক্ষোভ থাকলে তা জাতিগত নিধনের পর্যায় চলে যায়।


ধর্মীয় বিশ্বাস ও অবিশ্বাস দুইটায় আজ ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এই যে নাস্তিক আস্তিক দ্বন্দ্ব এর উৎপত্তি কোথায়?আমার মনে হয় শিক্ষা, স্বার্থ, অর্থনীতি ও রাজনীতি। 

আজ ধর্মে ধর্মে দ্বন্দ্ব, আস্তিক-নাস্তিক দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় হলো সবাইকে মেনে নেয়ার মানসিকতা তৈরি করা।ভিন্ন আদর্শের মধ্যে যে কমন বিষয়গুলো রয়েছে তাতে একমত হয়ে কাজ করা।

ধর্ম-অধর্ম, আস্তিকতা-নাস্তিকতা  নিয়ে লেখালেখি আমার কাজ নয়।দিন দিন যেভাবে দ্বন্দ্ব বেড়ে চলেছে তাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। দেশের সম্মান নষ্ট হবে। তাই লিখলাম। 

পৃথিবীতে কখনো শান্তি ছিল না। কোন আদর্শ পৃথিবীতে শান্তি আনতে পারে নি।কোন একটি আদর্শকে সবাই ভালবেসে মেনে নেয় নি।তাই আমি সঠিক বাকীরা ভুল এগুলো যারা বলবে তাদের থেকে লোকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।


আমি সবাইকে মেনে নিতে পারি।সবাইকে মেনে নেয়ার ক্ষমতা আমার আছে।আমি বাঙালী, আমি বাংলাদেশী, আমি নিরপেক্ষ। আস্তিক আমার ভাই, নাস্তিকও আমার ভাই।তবে যারা সংবিধান মানে না, সহিংসতা সৃষ্টি করে, সমাজে হিংসা ছড়ায়,কাউকে মেনে নিতে পারে না,তারা আমার কেউ না। ধর্ম ছিল ও থাকবে।এবং তার বিরোধিতাও থাকব।বুদ্ধিমান লোকেরা প্রশ্নের জবাব দেয় তেড়ে আসে না।


আস্তিক বনাম নাস্তিক দ্বন্দ্ব



পরিশেষে বলতে চাই, কেন মানুষ ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সেটা আস্তিকদের ভাবতে হবে।কেন মানুষ ধার্মিক হয় সেটাও ভাবতে হবে নাস্তিকদের। সবাই ধর্ম ব্যবসায়ী নয় আবার সবাই চেতনা ব্যবসায়ী নয়।পৃথিবীর সব সমস্যা ধর্মের উপর চাপালে হবে না।কোন নাস্তিক কি গ্যারান্টি দিতে পারবে ধর্ম না থাকলে পৃথিবীতে আর কোন সমস্যা থাকবে না? কোন আস্তিক কি গ্যারান্টি দিতে পারবে তাদের আদর্শে পৃথিবীতে শান্তি আসবে?বা আদৌ কি পৃথিবীতে কখনো পূর্ণ শান্তি ছিল? ছিল না।কারণ কেউ কাউকে মেনে নিতে পারে না। দয়া করে এই দ্বন্দ্বের খেলা বন্ধ করুন। আমরা চায় মিলেমিশে শান্তিতে থাকতে।সবাই যার যার আদর্শ লালন করুন জেনে-বুঝে। 

Post a Comment

أحدث أقدم