ও ব্যাকটিরিয়া উভয়েই প্রোক্যারিয়ট। কিন্তু এদের মধ্যে বিরাট দেহক্রিয়াগত পার্থক্য বিদ্যমান। নীল-সবুজ শৈবালদের কোষে ক্লোরোফিল 'a' থাকে। এরা সবুজ উদ্ভিদের মত সালোক সংশ্লেষণে (photosynthesis ) সক্ষম। সালোক সংশ্লেষণের সময় এরা পানির অণু ভেঙ্গে অক্সিজেন উৎপাদন করে। এই অক্সিজেন এদের দেহ থেকে নির্গত হয়।

পানির হাইড্রোজেন ও বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড একত্রিত করে এরা উন্নত উদ্ভিদের মত কার্বোহাইড্রেট উৎপাদন করে। এরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পর্ণে' (auto-trophic)। এরা এদের প্রয়োজনীয় সমস্ত জৈব বস্তু অজৈব বস্তু থেকে উৎপাদন করতে সক্ষম। কিন্তু অধিকাংশ ব্যাকটিরিয়াকে খাদ্যবস্তুর জন্য নির্ভর করতে

হয় জৈব বস্তুর উপর। বিশেষ করে উদ্ভিদের তৈরী করা কার্বোহাইড্রেটের উপর। কয়েক প্রকার ব্যাকটিরিয়া কোষে এক প্রকার ক্লোরোফিল থাকে, যা ক্লোরোফিল 'a' থেকে বিশেষভাবে আলাদা। যেসব ব্যাকটিরিয়ার ক্লোরোফিল আছে তারা পানির হাইড্রোজেনের সাহায্যে কার্বোহাইড্রেট উৎপাদন করে না।

তাদের ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন আসে অন্য যৌগ যেমন হাইড্রোজেন সালফাইড (HS) থেকে। তাই তাদের সালোক সংশ্লেষণের সময় কোন অক্সিজেন নির্গত হয় না। কয়েক প্রকার ব্যাকটিরিয়া আছে, যারা তাদের প্রয়োজনীয় সর্বপ্রকার জৈব বস্তু, অজৈব বস্ত, থেকে উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু তারা এই কাজে

আলোক শক্তিকে কাজে লাগায় না। তারা কাজে লাগায় অ্যামোনিয়া প্রভৃতি অজৈব বস্তুকে জীবিত (oxidize) করে যে শক্তি উৎপাদিত হয়, তাকে। এসব ব্যাকটিরিয়াকে তাই আর এক কথায় বলা হয় কিমোসিনথেটিক (Chemosyn-thetic) সাধারণভাবে, যেসব প্রোক্যারেয়টদের কোষেক্লোরোফিল থাকে না,তাকেই এখন উল্লেখ করা হয় ব্যাকটিরিয়া বলে। ব্যাকটিরিয়া বিভিন্ন শ্রেণীর হতে পারে।


বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যাকটিরিয়ার নাম


১। প্রকৃত ব্যাকটিরিয়া (Eubacteriae): এদের কথা আমরা পরে বিশদভাবে আলোচনা করবো।

২। মিকলো ব্যাকটেরিয়া (Myxobacteriac) : এরা এককোষী। কোষ-প্রাচীর স্থিতিস্থাপক ( flexible) ও খুব পাতলা। এরা শক্ত অথবা তরল জিনিসের উপর দিয়ে একে বেকে গড়িয়ে চলে ( gliding movement)

অনেকে একত্রে আঠার মত হড়হড়ে বস্তু উৎপাদন করে। একে বলা হয় নকল প্লাজমোডিয়াম ( pseudoplasmodium)। বিশেষ অবস্থায় মাইক্রোসিস্ট উৎপাদন করে।


৩। স্পাইরোকিটি (Spirochactae) : এককোষী এবং পাতলা কোষ-প্রাচীযুক্ত। কোষগুলি হয় খুব লম্বা ও বিশেষভাবে পেচানো। কোষপ্রাচীরের

নীচে খুব সূক্ষ সূতার মত আঁশ (axil filament) পাক থেয়ে থাকে। এই আঁশের সঙ্কোচন ও প্রসারণের সাহায্যে এরা একে বেকে চলাফেরা করে।স্পাইরোটিরা সাধারণতঃ স্বাধীনভাবে বসবাস করে। আর কিছু, স্পাইরোকিট পরজীবী। মানুষের সিফিলিস রোগের কারণ এক প্রকার পরজীবী স্পাইরো-কিট। অনেকে পাইরোকিটসদের শ্রেণীবদ্ধ করতে চান প্রোটোজোয়াদের সঙ্গে।



 রিকেটসিয়া (Rickettsiae) : এ সাধারণ ব্যাকটিরিয়া থেকে অনেক ছোট। দণ্ডাকৃতি অথবা গোল। এরা সন্ধিপদ প্রাণীর (arthropods) ও

মাননুষের দেহে পরজীবী হিসাবে বাস করে। এরা কেবল পরজীবী হিসাবেই জীবনধারণ করতে পারে। আগে এদের ভাইরাসদের সঙ্গে একত্রে শ্রেণীবদ্ধ করা হতো। কিন্তু এখন ইলেকট্রনমাইক্রোসকোপের সাহায্যে ছবি তুলে বোঝা যায়, এরা কোষ প্রাচীরযুক্ত এবং প্রোক্যারিয়ট ব্যাকটিরিয়ার মত মধ্যে থেকে

দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে বংশবিস্তার করে। মানুষের টাইফাস রোগের কারণ হলো এক প্রকার রিকেটসিয়া। এরা কীট পতঙ্গের কামড়ের ফলে মানব ও প্রাণীর দেহে প্রবেশ করে রোগ ঘটায়। কিন্তু সন্ধিপদ প্রাণীদের কোন ক্ষতি করে বলে মনে হয় না।


 মাইকোপ্লাজমা (Mollicuteae) : এক ধরনের খবে ছোট ব্যাকটিরিয়া।তবে রিকেটসিয়াদের মত তত ছোট নয়। এরা কোন নির্দিষ্ট আকৃতির হয় না। এদের কোষ আবরণ দ্বারা ঢাকা থাকে। এই আবরণ তিনটি স্তর দ্বারা গঠিত। এদের কৃত্রিম-আবাদ মাধ্যমে আবাদ করা যায়। এই জাতীয় জীবাণু, প্রথম পৃথক করা হয় গবাদি পশুর ফুসফুস থেকে নির্গত পদার্থ থেকে।একধরনের মাইক্রপ্লাজমা গবাদি পশুর নিউমোনিয়ার কারণ। মাইকোপ্লাজমাদের আগে বলা হতো প্লুরোনিউমনিয়া জাতীয় জীবাণু,( Pleuropneumonia like organisms, সংক্ষেপে, PPLO)। এরা ভাইরাসের

মত খুব ছোট ছিদ্রযুক্ত  চিনামাটির ফিল্টারের মধ্য দিয়ে চলে যেতে পারে।


কারণ, এই সব সূক্ষ ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে এই সব জীবাণু, লম্বা  ও অতি সূক্ষ সূতার আকার ধারণ করে চলে যেতে পারে। গাছের অনেক রোগের কারণ মাইক্রোপ্লাজমা। যেমন বেগুন গাছের ক্ষুদ্র-পত্র রোগ (little leaf disease of Bringal), তিলের ফাইলোডি (Phylody)। পূর্বে   এসব  রোগকে ভাইরাস-জনিত বলে মনে করা হতো।



নীল-সবুজ শৈবাল

নীলসবুজ শৈবালদের উদ্ভিদবিদরা বিশেষভাবেই মনে করেন উদ্ভিদ হিসাবে এবং এদের স্থাপন করেন উদ্ভিদ রাজ্যের একটি স্বতন্ত্র বিভাগে ( division ) এই বিভাগকে উদ্ভিদবিদরা উল্লেখ করেন সায়ানোফাইটা (Cyanophyta) হিসাবে।

 নীল-সবুজ শৈবালরা অনেকে সত্যকার এককোষী। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোষগুলি বিভক্ত হয়ে মালার আকারে লেগে থাকে আলাদা হয়ে যায় না। এদের সবাইকে সাধারণ কথায় নীল-সবুজ শৈবাল বলে। কারণ এদের দেহে এক ধরনের নীলাভ রঞ্জক বস্তু, (Phycocyamin) থাকে। অধিকাংশ নীল-সবুজ শৈবাল মিষ্টি পানিতে, বিশেষ করে বন্ধ পানিতে থাকে। এরা

অনেকে এক রকম পিচ্ছিল বস্তু, উৎপাদন করে। বর্ষাকালে যে পিচ্ছিল বস্তু, অনেক সময় মানুষের পা পিছলে পড়ে যাবার কারণ হয়, তা হলো সবুজ

শৈবালের দেহ নিঃসত পিচ্ছিল আঠালো বস্তু।


নীল-সবুজ শৈবালদের সাধারণতঃ দুটি বর্গে' (order) ভাগ করা হয়

(1) করোকক্কালে (Chroococcales) এবং

(২) হরমোগোনালেস (Hormogonales)

করোকক্কালেস বা নীল-সবুজ গোলাকৃতি কোষবিশিষ্ট। এদের দৃষ্টান্ত করোকক্কাস (Chroococcus) ও গ্লিওক্যাপসা (Gloeocapsa)। হরমোগোমানেসদের কোষরা পরস্পরের সঙ্গে লেগে থেকে ট্রাইকোষ গঠন

করে। এদের উপর থাকে বিশেষ ধরনের আবরণ। এই আবরণ ও কোষদের একত্রে বলা হয় ফিলামেন্ট (filament)। এদের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের পরে,

কোষপ্রাচীরক্তে কোষ থাকতে দেখা যায়। যাদেরকে বলা হয় হেটেরোসিস্ট ( heterocysts)। এরা স্বচ্ছ  উজ্জ্বল পদার্থে পূর্ণ থাকে।

এককোষী সায়ানোফাইটারা মাঝামাঝি বিভক্ত হয়ে (fisson) বংশ বিস্তার করে। কিন্তু হরমোগোনালিসদের ক্ষেত্রে হেটোসিস্ট-এর কাছ থেকে কিছুটা 


নীল-সবুজ শৈবাল ও ব্যাকটিরিয়া অংশ ভেঙ্গে পৃথক হয়ে যায়। এই পথেক হয়ে যাওয়া অংশ কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ফিলামেন্ট গঠন করে। বিচ্ছিন্ন অংশকে বলা হয় হরমোগোনিয়া

( hormogonia)। এর বিশেষ দৃষ্টান্ত হলো অসিলাটোরিয়া (Oscillatoria),

নস্টক (Nostoc), রিভুলারিয়া (Rivularia), গ্লিওট্রিসিয়া (Gyloeo trichia), অ্যানাবিনা (Anabaena) ব্যাকটিরিয়া ও নীল-সবুজ শৈবালের সম্পর্ক' মনে হয় খুব কাছের।নীল-সবুজ শৈবালে ক্লোরোফিল ও থাকে, আর ব্যাকটিরিয়াতে থাকে না। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে নীল-সবুজ শৈবাল ও ব্যাকটিরিয়ার বিভাগ নিয়ে দেখা দেয় যথেষ্ট মতভেদ। বেগিয়াটোয়া ( Beggiatoa )কে কেউ ফেলতে চান নীল-

সবুজ শৈবালের দলে । আবার কেউবা ব্যাকটিরিয়ার সঙ্গে। এরা পচা পানিতে থাকে এবং H2S-কে জারিত করে শ্বাসক্রিয়া সম্পন্ন করে। এরা দেখতে অসিলাটোরিয়ার (Oscillatoria) মত। কিন্তু এদের কোন ক্লোরোফিল নেই।

অনেকে এখনও নীল-সবুজ শৈবালদের সায়ানোফাইট (Cyanophyta) না বলে সায়ানোব্যাকটিরিয়া (Cyanobacteria) বলার পক্ষে।


জীবাণু তত্ত্ব: এবনে গোলাম সামাদ



Previous Post Next Post