ঢালাই লোহা কাকে বলে?

ঢালাই লোহা (Cast iron) কিউপোলা (Cupola) নামক চুল্লিতে লৌহ উৎপাদনের দ্বিতীয় স্তর হলো ঢালাই লোহা। পিগ লোহাকে পুনরায় গলন করে ছাঁচে ঠেলে ঢালাই লোহা উৎপাদিত হয়। এতে কার্বনের পরিমাণ থাকে সবচেয়ে বেশি। সব ধরনের ঢালাই কাজে ব্যবহার করা হয়।

ঢালাই লোহার বৈশিষ্ট্য 

(ক) অতিরিক্ত শক্ত ও ভঙ্গুর।

(খ) বেঁকে যায় না।

(গ) আকস্মিক কম্পন সহ্য করতে পারে না।

(ঘ) চাপ শক্তি সহ্য করতে সক্ষম।

(ঙ) অপেক্ষাকৃত কম তাপ মাত্রায় গলে যায়। (১১৫০-১২৬০° সেঃ)

(চ) এর উপর সহজে মরিচা পড়ে না।

(ছ) হাতুড়ির আঘাতে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যায়।

ঢালাই লোহাতে কি কি উপাদান থাকে?

ঢালাই লোহার ভিতরটা ভাঙলে স্ফটিকের মতো দানাদার দেখায়। এর মধ্যে কার্বনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ ৩-৫%। এছাড়া সিলিকন ০.৯৪-২.৮%, ম্যাঙ্গানিজ ০.৫%-১%, ফসফরাস ০.৩৫-১.২% এবং সালফার থাকে ০.১%। সিলিকন কার্বন লোহাকে শক্ত করে, এই কার্বনকে গ্রাফাইটে পরিণত করে, ফলে ঢালাই লোহা নরম ও গলিত অবস্থায় বেশি তরল হয়। সিলিকন সংকোচন শক্তিকেও কমায়। সালফার কার্বনকে লোহার সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত করায় এবং ঢালাই লোহাকে শক্ত ও ভঙ্গুর করায়। সংকোচন শক্তিকে বৃদ্ধি ও ধাতুকে শীঘ্র ঠাণ্ডা হতে সাহায্য করে। তবে সাধারণত এর পরিমণ ১% এর কম হওয়া ভালো। ম্যাঙ্গানিজ- এর পরিমাণ ০.৪% এর কম থাকলে ঢালাই লোহা নির্দোষ হয়। ফসফরাস ঢালাই লোহাকে নরম ও তরল করে।


কাস্ট আয়রন  এর প্রকারভেদ 

১। হোয়াইট কাস্ট আয়রন (White cast iron)

২। গ্রে-কাস্ট আয়রন (Gray cast iron)

৩। মটল্‌ড কাস্ট আয়রন Mottled cast iron)

৪। চিল্ড কাস্ট আয়রন (Chilled cast iron)

৫। মেলিয়েবল কাস্ট আয়রন (Malleable cast iron)

১। হোয়াইট কাস্ট আয়রন (White cast iron) কার্বন এতে যুক্ত অবস্থায় থাকে বলে শক্ত বেশি হয় ও মেশিনিং সমস্যা হয়। সাধারণত এই শ্রেণির ঢালাই লোহা পেটা লোহা (Wrought iron), ইস্পাত (Steel) তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।


২। গ্রে-কাস্ট আয়রন (Gray cast iron) কার্বন এতে যুক্ত অবস্থায় গ্রাফাইটরূপে অবস্থান করে। ঢালাই কাজে এই লোহা অতীব উপযোগী। সহজেই মেশিনিং করা চলে। এই লোহা দামে সস্তা ও যেকোনো জটিল আকৃতির ঢালাই করা চলে। মেশিনের বেড, বডি, খুচরা যন্ত্রাংশ, ইঞ্জিনের সিলিন্ডার, পিস্টন (Piston), পিস্টন রিং (Piston ring), ফ্লাই হুইল (Fly Wheel), পানির পাইপ ইত্যাদি তৈরি করতে এই লোহা খুবই উপযোগী।


৩। মটল্‌ড কাস্ট আয়রন Malleable cast iron): হোয়াইট ও গ্রে-কাষ্ট আয়রনের মধ্যবর্তী আর এক শ্রেণির ঢালাই লোহাকে মটলড্ কাস্ট আয়রন বলে। এই লোহা মেশিনিং যোগ্য ও অপেক্ষাকৃত নরম। ছোট ঢালাই করা যন্ত্রাংশ এই লোহার তৈরি।


৪। চিল্ড কাস্ট আয়রন (Chilled cast iron): কোন বিশেষ কাজে ব্যবহারের জন্য ঢালাই এর সময় ছাঁচের মধ্যে ইচ্ছা করেই ঢালাইকে দ্রুত ঠাণ্ডা করলে চিন্ড কাস্ট আয়রন হয়ে যায়। এর বৈশিষ্ট্য হলো দ্রুত ঠান্ডা হওয়াতে ঢালাই এর উপরিভাগ (Surface) শক্ত হয়ে যায়। ঢালাই লোহার তৈরি রেলগাড়ির চাকা, আখ মাড়াই মেশিন এই পদ্ধতিতে তৈরি।


৫। মেলিয়েবল কাস্ট আয়রন (Matteable cast iron): কম পরিমাণ সিলিকন এবং অধিক পরিমাণ কার্বন বিশিষ্ট হোয়াই কাস্ট আয়রনকে উত্তপ্ত অবস্থায় ক্রমাগত কয়েকদিন রাখার পর ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা করে এই লোহা তৈরি করা হয়।


কাস্ট আয়রন কিভাবে চেনা যায়? 

(i) গ্রে-কাস্ট আয়রন শনাক্তকরণের প্রধান উপায় রং দেখে। এর রং ধূসর কালো বর্ণের এবং সহজেই মেশিনিং করা যায়।

(ii) হোয়াইট কাস্ট আয়রন ও রং দেখে শনাক্ত করা যায়। এর রং রূপালী সাদা। এটি মেশিনিং করা কষ্টসাধ্য।

Previous Post Next Post