বিরাম চিহ্নের ব্যবহার ও নিয়ম

বাংলা ২য় পত্রের বিরাম চিহ্ন অধ্যায় থেকে প্রায় প্রতিটি সরকারি চাকরির পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। বিশেষ করে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায়।নিচে বাংলা ব্যাকরণ অংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বিরাম চিহ্নের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হলো

বিরাম চিহ্নের কাকে বলে?

বাক্যের অর্থ, ভাব, আবেগ সুস্পষ্ট করে বেঝানোর জন্য বাক্যের শেষে বা কখনো দুই বাক্যের মাঝে বা শব্দের সংক্ষেপণে যে সকল চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে বিরাম চিহ্ন বলে।বাংলা ভাষায় সর্বমোট ১২ টি বিরাম চিহ্নের ব্যবহার আছে।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রথম বিরাম চিহ্নের প্রচলন করে।

আসুন বিরাম চিহ্ন, বিরতির সময়, কোথায় ব্যবহার হয় ও উদাহরণ জেনে নেয়া যাক।


বিরাম চিহ্নের ব্যবহার

১ কমা বা পাদচ্ছেদ  এর ব্যবহার ( , ) 

 বিরতির সময় : এক বলতে যে সময় লাগে ততোটুকু।

ব্যবহার: 

ক. বাক্যপাঠকালে সুস্পষ্টতা ও অর্থ বিভাগের জন্য। সুখ চাও, সুখ পাবে পরিশ্রমে।

খ. পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক পদ পরপর বসলে কমা চিহ্ন বসবে। সুখ,দুঃখ,আশা, নৈরাশা এক মালিকার পুষ্প। 

গ. কাউকে  সম্বোধন করে কিছু বললে।  রফিক,বাড়ি যাও।

ঘ. জটিল বাক্যের অবতারনা হলে কমা বসবে। 

গতকাল তুমি যে রসগোল্লা খেয়েছিলে,সেটা আজকে আমি খাব।

ঙ. উদ্ধরণ চিহ্নের পূর্বে। শিপুল বলল, ' সে আগামীকাল করোনা ভাইরাস এর টিকা নিতে যাবে'। 

আ. তারিখ লেখার সময় বার ও মাসের পর কমা বসবে। 

৩ আগস্ট, মঙ্গলবার, ২০২১ সাল। 

ছ. বাড়ি ও রাস্তার নম্বরের পর।

৭০, কবরি রোড, চুয়াডাঙ্গা- ৭০২০

জ.  নামের পরে ডিগ্রিসূচক পরিচয় লিখতে হলে কমা বা পাদচ্ছেদ বসবে।



২. উদ্ধরণ বা উদ্ধৃতি চিহ্ন  ( "  " ) এর ব্যবহার

কারর বক্তব্য বা কথা হুবহু তুলে ধরতে ব্যবহার হয়।এ চিহ্ন থাকলে এক বলতে যে সময় লাগে ততোক্ষণ থামতে হয়। 

যেমন:  শিক্ষক বলল, " তোমাদেরকে আগামীকাল লেদ মেশিনের উপর পাঁচ পৃষ্ঠার এ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে হবে"।  


৩. সেমিকোলন বা অর্ধচ্ছেদ (  ; ) এর ব্যবহার

এক দুইবার বলতে যে সময়ের প্রয়োজন ততোক্ষণ থামতে হয়। কমা অপেক্ষা বেশি বিরতির প্রয়োজন হলে বা একাধিক স্বাধীন বাক্যকে একসাথে লিখলে সেমিকোলন ব্যবহার হয়।

যেমন: সংসারের মায়াজালে আবদ্ধ আমরা ; এ  মায়া কি সত্যি দুশ্ছেদ্য? 


৪. দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (।)  এর ব্যবহার

সাধারণ বাক্যের পরিসমাপ্তিতে ব্যবহার করা হয়। এই চিহ্ন থাকলে এক সেকেন্ড থামতে হয়। যেমন: সে ভাত খায়।


৫. প্রশ্ন বোধক (?) এর ব্যবহার

কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলে এই চিহ্ন ব্যবহার হয়। এই চিহ্ন থাকলে এক সেকেন্ড থামতে হয়। 


৬. বিশ্ময়সূচক চিহ্ন ( ! ) এর ব্যবহার

বাক্যে আবেগ, বিষাদ,দুঃখ, ভয়, আনন্দ ইত্যাদি প্রকাশ পেলে  বিশ্ময় চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। এই চিহ্ন থাকলে এক সেকেন্ড থামতে হয়। যেমন: কি সুন্দর পাখী!


৭. কোলন (:) এর ব্যবহার

অপূর্ণ বাক্যের পরে অন্যএকটি বাক্যের অবতারণা হলে। এই চিহ্ন থাকলে এক সেকেন্ড থামতে হয় ।  যেমন: বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলো : আমরা সকলে কক্সবাজার যাচ্ছি। 


৮. কোলন ড্যাস ( :-) এর ব্যবহার

উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত  দিতে এই চিহ্ন ব্যবহার হয়। এই চিহ্ন থাকলে এক সেকেন্ড থামতে হয়। 

যেমন: পদ পাঁচ প্রকার যথা:- বিশেষ্য, বিশেষন, সর্বনাম, অব্যয়, ও ক্রিয়া। 


৯. ড্যাস ( _)  এর ব্যবহার

দুই বা ততোধিক যোগিক বা মিশ্র বাক্যের সংযোগে ব্যবহার হয়।এই চিহ্ন থাকলে এক সেকেন্ড থামতে হয়।  যেমন: দারিদ্র্যের দয়া করো _ এতে সম্মান যাবে না _ বাড়বে।


১০. বিলোপ ( ' ) 

কোন বর্ণ বিশেষ এর লোপ বেঝাতে ব্যবহার করা হয়। এই চিহ্ন থাকলে থামার প্রয়োজন নাই।যেমন:  মাথার 'পরে বিশাল আকাশ। 


১১.( - ) এর ব্যবহার

এই চিহ্ন  থাকলে থামার প্রয়োজন নাই।সমাসবদ্ধ পদকে আলাদা করার জন্য ব্যবহার করা হয়। যেমন: আমরা প্রীতি-উপহার নিয়ে স্যারকে অভিবাদন জানালাম।

১২. বন্ধনীচিহ্ন (),[],{}, এর ব্যবহার

সাধারণত গনিত শাস্ত্রে ব্যবহার করা হয়।তবে প্রথম বন্ধনী বিশেষ ব্যাখ্যা দিতে ব্যবহার হয়। যেমন: তিনি নদীয়াতে ( বর্তমান চুয়াডাঙ্গা) জন্মগ্রহণ করেন। 


বিরাম চিহ্ন অধ্যায়ের কমা, কোলন, কত সেকেন্ড থামতে হয়?  বিষয়গুলো সবধরনের সরকারি চাকরির প্রস্তুতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

বিশেষ করে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষাতে আসে



Previous Post Next Post