Mbdjobs is a Bengali educational website.Mbdjobs helps you to prepare for bd jobs exam. Previous jobs question, diploma jobs solution, bpsc jobs preparation etc

কালো মেয়ের গল্প- black Girl

 একটি কালো মেয়ের স্বপ্ন 


আমি কালো মেয়ে তবে মন নয়।গায়ের চামড়া। শুনেছি গায়ের চামড়া ফর্সা হবে না কালো হবে সেটা Pigment melanin এর উপর নির্ভর করে। তাহলে আমি চাইলেও ফর্সা হতে পারব না।কারণ শরীরের কোষগুলো সৃষ্টিকর্তা  এভাবে সৃষ্টি করেছেন।কালো হওয়ার কি যন্ত্রণা তা শৈশব-কৈশরে বুঝতে পারি নি।ফর্সা হওয়ার ব্যার্থ চেষ্টা করে চলেছি প্রতিনিয়ত। হাজার টাকার কসমেটিকস,হলুদ,সাবান আরো কত কি!লাভ হচ্ছে না। ঐ যে Melanin এর প্রভাব।কালো হওয়ার কিছু সুবিধা আছে।বখাটেরা উত্ত্যক্ত করে না।তবে বোরকা পরে হাঁটলে অনেকে চেয়ে থাকে।কারণ চেহারা তো আর দেখা যায় না।আমার এক বন্ধু বলেছিল "ছেলেরা নাকি  স্বাস্থ্যবান মেয়েদের শরীরের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়।" তাছাড়া আমার কপালটা নাকি সুন্দর।তাই হয়তো বোরকা পরলে আমার স্বাস্থ্যবান শরীর ও কপাল দেখে ছেলেরা চেয়ে থাকে।আমি জানি মুখ খুলে চললে তারা এভাবে বিশেষ দৃষ্টিতে  তাকিয়ে থাকবে না।তবে হ্যাঁ প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছি দু'বার। একজনের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পেরেছি ছেলেটার চরিত্রে সমস্যা আছে।এর আগেও আমার পরিচিত দু'জন মেয়ের সাথে প্রেম করেছে সে। রাজি হয় নি।দ্বিতীয় ছেলেটার প্রস্তাবে রাজি হয়ে ছিলাম। মোবাইল ফোনে কথা হতো।দু পাঁচ মিনিট সাধারণ কথা-বার্তা বলে অশ্লীলতার দিকে চলে যেত সে।আমার নাকি কপাল সুন্দর, বডি ভালো,আমার নাকি------। আমি শুধু শুনে যেতাম।কোন মন্তব্য করতাম না।ছেলেটা অশ্লীল কথা বলতে বলতে থেমে যেত। আমি রেসপন্স করতাম না, তাই হয়ত মজা পেত না।একদিন একটি পার্কে আমরা দেখা করি।কিছুক্ষণ গল্প করতে করতে সে আমার হাত ধরে। আমি বার বার হাতটা সরিয়ে নিচ্ছিলাম।একসময় ছেলেটা বিরক্ত  হয়ে উঠে পড়ে।রাগ করে কিছুটা দূরে গিয়ে বসে থাকে।আমি  একদৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।ভাবলাম আমার মতো কালো একটি মেয়েকে একটি ছেলে এত ভালবাসে আর আমি তাকে আমার হাতটা ধরতে দেব না!আমি এগিয়ে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালাম। হাতটা ধরে বললাম"সরি"।ছেলেটা দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মেহেরুন্নেসা।আমার মনের পুঞ্জিভূত  আবেগ,পরম সুখ,আর তার স্পর্শের অনুভূতি এতোটা ভালো লাগলো যে আমি আমার শরীরে সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেললাম।সে আমাকে চুম্বন করতে চেয়েছিল।

কালো মেয়ে



আমি বলেছিলাম "আজ না কাল আবার দেখা করব"।আমি হোস্টেলে চলে আসি। রাতে বাড়ি থেকে ফোন এলো,দাদি অসুস্থ। আমি রাতেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।আমার দাদি দেখতে অনেকটা আমার মত।ছোট বেলায় আমার দাদি আমাকে কালো বুড়ি বলে ডাকতো।এখনো মাঝে মাঝে ডাকে।পাঁচ বছর বয়স থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত আমি আমার দাদির কাছে ঘুমিয়েছি।যখন আমার বয়স তিন বছর তখন আমার দাদা মারা যায়। দাদার চেহেরাটা আমার  মনে নেই।

তিন দিন তিন রাত আমি আমার দাদির পাশে ছিলাম।আমার চোখের সামনে মানুষটি মারা গেল।অঝোরে কেঁদেছি কিন্তু চিৎকার করে কাঁদতে পারিনি।কারণ আমি চিৎকার করে কাঁদতে পারি না।।মনে হচ্ছিল  একটু চিৎকার করে কাঁদতে পারলে শান্তি পেতাম।ছেলেটা প্রতিদিন একবার দু'বার করে ফোন দিত। আমি ফোন কেটে দিতাম।যে দাদি আমাকে এতো ভালোবাসতো তাকে ফেলে রেখে প্রেমালাপ করবো? তাতো হয় না।প্রায় ১০ দিন পর ছেলেটাকে ফোন দেয়, সে ফোন ধরে না।ফেসবুকে গিয়ে দেখি আমাকে সে ব্লক করে দিয়েছে। পরের দিন আবারো ফোন দেয়।সে ফোন কেটে দিয়ে ম্যাসেজ দিল " তুমি তোমার মত থাকো"।আমি লম্বা একটা ঘুম দিয়ে রাতে পড়তে বসলাম। আমার রুমমেট জানালো, আয়েশার আপুর ব্যাংকে চাকরি হয়েছে। আয়েশা আপু দেখতে তেমন সুন্দরী না।কালো এবং বেঁটে।প্রচুর পরিশ্রম করতো।আপু বলতো "যাদের চেহেরা নেই তাদের পরিশ্রম করতে হয়।চেহেরাটা থাকলে অনেক আগেই বিয়ে হয়ে যেত।  নিজের নামে নতুন ফেসবুক একাউন্ট খুলি।প্রতিদিন তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট আসতে থাকে।।একসেপ্ট করলেই মেসেজ দিত ছেলেরা।হ্যালো,কেমন আছেন? কি খবর, উত্তর দিচ্ছেন না কেন?কেউ কেউ তার দুঃখের কথা জানাতো।আমি একা।কেউ আমাকে পছন্দ করে না।আপনি কি আমার বন্ধু হবেন।এসব আরকি।একদিন গল্পে গল্পে আয়েশা আপুকে সব বলি।আয়েশা আপু বলে, এদের বিশ্বাস করবি না।আমি এদের বিশ্বাস করে ঠকেছি।এরা সব ধান্দাবাজ খেয়ে-টেয়ে পালাবে।।আয়েশা আপু এখন ব্যাংকার হয়ে গেছে। ছেলেরা এখন তাকে পাওয়ার আশায় লাইন ধরবে।

আমি পড়াশোনায়  মন দিতে শুরু করেছি।অনার্স শেষ হতে আর বছরখানেক লাগবে।আমিও একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াবো।নিজেকে নিয়ে গর্ব করবো।প্রামাণ করব যে চেহারাটা আসল যোগ্যতা নয়।আমি স্বনির্ভর হয়ে বেঁচে থাকতে চায়।কারর করুণা বা দয়াতে নয়।সকল কালো মেয়েদের বলবো," আফসোস, হতাশা জীবনে শান্তি আনতে পারে না।ভাবুন আর বলুন"আমার যা নেই তা নেই।আর যা আছে তা দিয়ে ভবিষ্যৎ গড়তে হবে।"

আমি আরো বেশি শক্তি পেলাম আমার বাল্যকালের এক বান্ধবীর কথা শুনে।আমার মা ফোন করে বলল,রুবিনা স্বামীর উপর রাগ করে বাড়ি চলে এসেছে। রুবিনার স্বামী অন্য মেয়ের সাথে পরাকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছে।রুবিনা বেশ সুন্দরী। সাদা ফর্সা,উঁচু লম্বা, বড় কালো চুল।বিয়ের পরেই তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।মনে হয়ে ডিভোর্স হয়ে যাবে।এখন সে কী করবে?হয়ত আবার তার বিয়ে হবে।আজ যদি রুবিনা পড়াশোনা চালিয়ে যেত হয়ত নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতো।এতোটা চিন্তা করতে হতো না।


No comments: