ব্রাত্য রাইসু সম্পর্কে
আমার বয়স কম।ব্রাত্য রাইসুর হাঁটুর বয়সী হব হয়ত।কিন্তু ব্রাত্য রাইসুকে দেখলে আমার চেয়ে তরুণ বলে মনে হবে। রাইসু সাহেব আত্মপ্রচারক নন।রাইসু তার সম্পর্কে কোথাও বিস্তারিত লিখেছেন এমনটা আমার চোখে পড়েনি।খন্ড খন্ড লিখেছেন।। হয়ত নিজের সম্পর্কে একধরনের সাসপেন্স রেখে যেতে চান। রাইসুর বয়স সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় ১৯ নভেম্বর ১৯৬৭ সালের শনিবার দিবাগত রাতে ঢাকার বাড্ডায় তার জন্ম। ঢাকায় বড় হয়েছেন।রাইসুর জন্ম পরবর্তী নাম "রইছ উদ্দীন মোহাম্মদ আবুল খায়ের ঢালী"। তিনি তার এই নাম পরিবর্তন করে ব্রাত্য রাইসু রাখেন। সাংবাদিকতা করতেন।তিনি একজন কবি-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী,ও সমালোচক। "বড় লোকদের সাথে মিশতে চায়" তার বিখ্যাত কবিতা।কবিতাটি শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী ও বুদ্ধিজীবী মানস চৌধুরী আবৃত্তি করে তরুণ প্রজন্মকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। "আকাশে কালিদাসের লগে মেঘ দেখিতেছি" তার বিখ্যাত বইগুলোর একটি।
রাইসু সাহেবকে মূলধারার গনমাধ্যমগুলোতে দেখা যায় না।তার সরব উপস্থিতি মেলে ফেসবুকে।
যেভাবে রাইসুকে জানলাম
পেশায় আমি একজন প্রকৌশলী। ছোটকাল থেকে সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞান নিয়ে আমার বরাবরই আগ্রহ ছিল।এক সময় হুমায়ূন আহমদকে পড়তাম।প্রচুর পড়েছি।ওহ! ভালো কথা শোনা যায় হিমু চরিত্রটি রাইসুকে অবলম্বন করে লেখা। যাইহোক তো হুমায়ূন পড়া শেষ হলে আজাদ সাহেব ও নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের লেখা পড়া শুরু করি।তারপর শুরু করলাম আহমদ ছফার লেখা।রাইসু সাহেব আহমদ ছফার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। রাইসু নামটা ঐখান থেকে প্রথম শুনি।একসময় ফেসবুকে রাইসুর পেজটা পায়।গত দু বছরে উনি যা লিখেছেন তা সবই পড়েছি।প্রথম প্রথম উনার কিছু লেখার বিরোধিতা করতাম। এখন মনে হয় আমি ভুল ছিলাম।
![]() |
Bratya Raisu |
ফেসবুকে নারীবাদ সম্পর্কে লিখে বেশ আলোচিত হউন।একজন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারের নাম উল্লেখ করে "চিনি না" লিখে রাইসু সোস্যাল মিডিয়াতে আরো বেশি ছড়িয়ে পড়েন।বিখ্যাত সাংবাদিক খালেদ মহিউদ্দিন তার ফেসবুকে প্রিয় বুদ্ধিজীবীদের তিন জনের মধ্যে রাইসুকে রেখেছিলেন। এরপর থেকে রাইসুু ফেসবুক পেজ এর ফলোয়ার বাড়তে থাকে।
প্রথম কয়েকটি পোস্ট দেখে মনে হতে পারে রাইসু পাগল, অথবা এটেনশন সিকার। দিনশেষে এমন একটি পোস্ট দিবে যা আপনার মুখ বন্ধ করে দেবে।
রাইসু যেভাবে চিন্তা করেন
রাইসুর সাথে আমার কোন পরিচয় নেই।আমি তার একজন ফ্যান-ফলোয়ার মাত্র। আমার কাছে যেমনটা মনে হয় তা লিখছি। কোন একটি ঘটনা তার সামনে আসলে তার পক্ষে বিপক্ষে একটি নিরপেক্ষ বিন্দুতে দাঁড়িয়ে ভাবেন। পক্ষ ও বিপক্ষ উভয় পক্ষকে নিরপেক্ষ করতে চান না। উনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন আমরা কেউই নিরপেক্ষ নয়। হয়ত উনি বোঝাতে চান আমরা কেউ সঠিক নয় আবার কেউ দোষী নয়। বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গা দিতে গিয়ে উনি বলেছেন, যারা সমস্যা ধরিয়ে দেয় তারা বুদ্ধিজীবী।সমাধান করা তাদের কাজ নয়।লোকে রাইসুকে মেনে নিতে পারেনা আবার ভুল প্রমাণ করতে পারে না।আসলে রাইসু তার পাঠকদের সাথে খেলেন। সারাদিন পাঠকদের উত্তেজিত রেখে দিনশেষে ছোট্ট স্ট্যাটাস দিয়ে শান্ত করিয়ে দেন।উনি উনার বিভিন্ন লেখায় বোঝাতে চান বিজ্ঞানও একটি ধর্ম। কিছু লোক যেমন ঐশ্বরিক ধর্ম প্রচার করছে তেমনি কিছু লোক বিজ্ঞান ধর্মও প্রচার করছে।উনি হয়ত বোঝাতে চান আমাদের আদর্শ আর বিশ্বাস ভিন্ন কিন্তু মানসিকতা এক।
ব্রাত্য রাইসু মানুষকে বুঝতে পারেন। সমাজের সমস্যা,মানুষের দূর্বলতা গভীর থেকে তুলে ধরেন তিনি।বাংলাদেশে আরো অনেক বুদ্ধিজীবী,চিন্তাবিদ রয়েছে তবে ব্রাত্য রাইসুর চিন্তার গলিটা ভিন্ন।তার লেখা মানুষকে চিন্তা করতে শেখায়।মনে হতে পারে তিনি ভুল বলছেন কিন্তু ভুলগুলো চিহ্নিত করে ব্যাখ্যা করা কঠিন।অনেক জ্ঞানী-গুণী, বুদ্ধিজীবী-অ্যাকটিভিস্টদের বলতে শোনা যায় ,"এটা করা উচিত, ঐটা করতেই হবে"। কিন্তু মানুষ তথা সমাজের সমস্যা আসলে কোথায় তা রাইসুর মত করে এতোটা গভীর থেকে কেউ বলতে পারে না।খুব সম্ভবত তার কাজ সমস্যাগুলো গভীর থেকে তুলে আনা। অর্থাৎ ধরিয়ে দেয়া।আর আপনি আপনার করণীয় ঠিক করবেন।
রাইসুর ব্যক্তিগত জীবন
এক সময় মানুষের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমার বেশ আগ্রহ ছিল।এখন তেমন নেই।তাই রাইসুর বন্ধু, প্রেমিক বা বান্ধবীরা তার সম্পর্কে যতটুকু লিখেছেন তা বলার প্রয়োজনবোধ করছি না।
শেষ কথা
উনাকে গুরু মানি ব্যাপারটা এমন না।তবে শিখেছি কিভাবে চিন্তা করতে হয়।আর চিন্তার জগতকে সমৃদ্ধ করার দায়িত্বতো আমারই।
এখন আমি সাহিত্য, দর্শন নিয়ে চিন্তা করি না।তাই উনাদের লেখা তেমন পড়া হয় না।আমি এখন বিজ্ঞান, আবিষ্কার ও প্রকৌশলবিদ্যা নিয়ে কাজ করি।এগুলো নিয়ে থাকতে চাই। দর্শন, সাহিত্য ছেড়ে দিয়েছি।তবে উনাকে ভুলে যাওয়া কঠিন হবে।কারণ রাইসুর লেখার সাথে পরিচয় না ঘটলে হয়ত আমার চিন্তার জগত এতো সমৃদ্ধ হতো না।
আরো পড়ুন
রাইসুর ফেসবুক লিংক
No comments:
Post a Comment