ইন্টারনেট কি?


জেনে নিন।ইন্টারনেট কী, ইন্টারনেট কে আবিষ্কার করে? ইন্টারনেট কাকে বলে।ও ইন্টারনেট কীভাবে আবিষ্কার হলো? 

বিশ শতকের এক বিরাট আবিষ্কার হল ইন্টারনেট। শব্দটা নতুন হলেও এর সূচনা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। পৃথিবীর দুই বিরাট শক্তিশালী দেশের মধ্যে তখন চলছে ঠাণ্ডা লড়াই। দুই দেশই পরমাণু বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে। তখন দুই দেশেরই প্রতিরক্ষা দপ্তরের প্রধান চিন্তা হয়ে উঠল যে পরমাণু বোমার ক্ষতির হাত থেকে কিভাবে তথ্য প্রচার ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে রক্ষা করা যায়। আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা প্রথম একটি উপায় খুঁজে পেলেন।


পেন্টাগন শহরে তখন তথ্য প্রচারে কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হয়ে গেছিল। তাঁরা ভাবলেন কম্পিউটারের তথ্যগুলিকে যদি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে অনেকগুলি চ্যানেলে পাঠানো যায় তাহলে কোনো কারণে একটা চ্যানেল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্য চ্যানেলের মাধ্যমে তথ্য পাঠানো যাবে।প্রতিরক্ষা বিভাগের অ্যাডভান্স রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সির (আরপা) অধিকর্তা বব টেলর আরপানেট নামক একটি নেটওয়ার্ক তৈরী করে ফেললেন।এভাবে প্রতিরক্ষা স্তরে তথ্য প্রচারের কাজ শুরু হল। এই পদ্ধতিতে তথ্য গোপন ভাবে প্রচার করার সুবিধাও ছিল।কম্পিউটারের সঙ্গে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার প্রথম সংযোগ ঘটে ১৯৪০সালে। নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডার্টমাউথ কলেজ থেকে নিউইয়র্কের বেলল্যাবরেটরিজ-এর একটি ক্যালকুলেটরে টেলিগ্রাম লাইনের মাধ্যমে ডঃ জর্জস্টিবৎস তথ্য পাঠিয়েছিলেন।

১৯৮০ সালে ঘটল এক চমকপ্রদ ঘটনা। সেসময় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার টিম বার্নার্স-লি কাজ করছিলেন সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় ইউরোপিয়ান ল্যাবরেটরি ফর পার্টিকল ফিজিকস'-এ। তিনি ভাবতে

লাগলেন এমন একটা কম্পিউটার প্রোগাম তৈরী করলে হয় যেটা মানুষের মস্তিষ্কের মত কাজ করবে। মস্তিষ্কের মতই সেখানে সঞ্চিত থাকবে তথ্য,

প্রয়োজনে সুইচ টিপে সেই তথ্য জেনে নেওয়া যাবে। এই ভাবনা থেকেই তিনি ‘হাইপার টেক্সট’ নামে এক নতুন সফটওয়্যার তৈরী করলেন। এর মাধ্যমে তাঁর কম্পিউটারে রাখা তথ্যগুলোকে পরস্পর জুড়ে দিলেন। প্রতিটি তথ্যকে পৃথক সংখ্যায় চিহ্নিত করলেন। ঐ সংখ্যার মাধ্যমে এক তথ্য থেকে আরেক তথ্যে যাতায়াত করতে লাগলেন। বন্ধুদেরও অনুরোধ করলেন তাঁদের কম্পিউটারের তথ্যগুলিকে এই নতুন সফটওয়ারের মাধ্যমে তাঁরা কম্পিউটারের সঙ্গে জুড়ে দিতো। এরপর তিনি 'হাইপারটেক্সট মার্ক ল্যাঙ্গয়েজ' নামক বিশেষ ‘কোডিং সিস্টেম' তৈরী করলেন। এর মাধ্যমে

যেকোনো কম্পিউটারের যেকোনো দুটি তথ্যের মধ্যে যোগসূত্র গড়ে উঠল।যাকে বলে 'হাইপার টেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল।' এজন্য প্রতিটি তথ্যকেনিজস্ব পরিচয় দেওয়া হয়।

কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক যখন নির্দিষ্ট অঞ্চলের কম্পিউটারগুলির মধ্যে তামার তার বা অপটিকাল ফাইবার দিয়ে সংযোগ করা হয় তখন তাকে বলে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা ল্যান। আর যখন নেটওয়ার্কের বিস্তার কোনো নির্দিষ্ট গণ্ডীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না তখন তাকে বলে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক বা ওয়ান। এই নেটওয়ার্কে কম্পিউটারগুলির সংযোগ

করার জন্য মাইক্রোওয়েভের সাহায্য নিতে হয়।

কম্পিউটার যখন তথ্য পাঠায় তখন সেটি নির্দিষ্ট সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে। অন্যপ্রান্তের নির্দিষ্ট একটি কম্পিউটারের সংকেতের সাথে সেই সংকেত মিলে গেলেই তথ্য নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে যায়।ইন্টারনেটে কম্পিউটারে পাঠানো বৈদ্যুতিক সংকেত দুটি নির্দিষ্ট বৈদ্যুতিক মানের মধ্যে তাৎক্ষণিক ওঠানামা করে। তাই এই সংকেতকে বলে পালস। এই পালসকে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাবার জন্য মডিউলেটর ডিমডিউলেটর বা মোডেম নামক একটি যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া হয়। এটি

রাখা হয় কম্পিউটার ও টেলিফোন লাইনের মধ্যে। মোডেম কম্পিউটারে পাঠানো পালসের দুটি আলাদা বৈদ্যুতিক মানের জন্য আলাদা আলাদা দুটি নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের একটানা সংকেত তৈরী করে টেলিফোন লাইনে চালু করে। আবার ঐ কম্পিউটারে সংকেত নেওয়ার আগে নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের একটানা সংকেতকে পালসে নিয়ে আসে। অর্থাৎ ইন্টারনেটের সুবিধা পাবার

জন্য একটি পার্সোনাল কম্পিউটার, একটি মোডেম এবং একটি এস. টিডি লাইন থাকলেই হলো। ইন্টারনেটের সবথেকে বড় সুবিধে হল এক প্রান্তের গ্রাহক তার বক্তব্য

কি-বোর্ডের মাধ্যমে কম্পিউটারে ঢুকিয়ে নির্দিষ্ট কোনো সময়ে অন্যপ্রান্তের নির্দিষ্ট নম্বরে ডায়াল করার নির্দেশ দিতে পারেন। লাইন পেলেই অন্য প্রান্তের ব্যক্তির কম্পিউটারে সেটি স্থানান্তরিত হয়ে যাবে। সে ব্যক্তি যদি

তখন ঐ কম্পিউটারের কাছে না থাকেন তবে তার সুবিধামত সময়ে তিনি কি-বোর্ডের মাধ্যমে নির্দেশ দিলেই তাঁর কাছে পাঠানো সব তথ্য ডিসপ্লে

বোর্ডে ফুটে উঠবে।দুটি কম্পিউটারের মধ্যের দূরত্ব যদি বেশী হয় এবং দূরত্বের কারণে যদি

সেখানে টেলিফোন লাইনের সাহায্যে যোগাযোগ গড়ে তোলা সম্ভব না হয় তবে সেখানে যোগাযোগের কাজে সাহায্য করে যোগাযোগ উপগ্রহ।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে চিঠি, ছবি ইত্যাদি পাঠাবার সুযোগও মিলছে। এরনাম হল ই-মেল। পৃথিবীর যেখানেই ই-মেল পাঠানো হোক না কেন তার 

খরচ পড়ে কয়েক টাকা মাত্র। আর সবচেয়ে বড় সুবিধা যাকে লেখা হচ্ছে সে ছাড়া ঐ চিঠি আর কেউ পড়তে পারবে না। ই-মেল যেমন লিখে লিখে কথা বলা তেমনি ইন্টারনেট ফোনের মাধ্যমে টেলিফোনের মত কথাবার্তাও বলা যায়। এক্ষেত্রে বাক সংকেতকে ইন্টারনেট ফোন সফ্ট ওয়্যার ডিজিটাল

সংকেতে রূপান্তরিত করে পাঠায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে।


ইন্টারনেট


Previous Post Next Post