সেনের বাজার

সেনের বাজার খুলনা শহরের বিপরীতে ভৈরব নদের উত্তরপাড়ে সেনের বাজার দীর্ঘকাল ছিল গুরুত্বপূর্ণ। জনশ্রুতি বাজারটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন লক্ষ্মণ সেন। সেনের বাজারের কাছে কাজির জঙ্গল, কাজির দীঘি ও কাজির দেউড়ি বিস্ময় সৃষ্টি করত মানুষের মনে। এই কাজি কে ছিলেন। জনশ্রুতি, গৌড়ের অধিপতি আল-উদ্-দীন হুশেন শাহের আমলে দুজন কাজি ছিলেন সুবি খাঁ এবং সূচি খাঁ । এদের পিতা হুসেন শাহের উচ্চপদস্থ কর্মি পঞ্চরঙ্গ খাঁ প্রথম জীবনে ছিলেন হিন্দু। তখন চতুরঙ্গ ভদ্র হিসাবে পরিচিত ছিলেন। রেণীগঞ্জের উত্তরে ভদ্রগতিতে ছিল তাঁর গড় বেষ্টিত অট্টালিকা। সে সব চলে গেছে ভৈরবগর্ভে। পঞ্চবঙ্গ মেয়ের বিয়ে দেন হুসেনশাহর প্রধান অমাত্য গোপীনাথ বসু বা পুরন্দর খাঁর ভাইপোর সঙ্গে। মেয়ে-জামাইকে তিনি ভদ্রগাতির কাছে শ্রীফলতলা গ্রামে বিশাল অট্টালিকা বানিয়ে দেন। অনেক জলাশয় ছিল। এই সময়ে এক জ্যোতিষী পঞ্চরঙ্গের হাত দেখে ভবিষ্যৎবাণী করেন, তার সমস্ত বিষয় বৈভব ভোগ করবে তার দৌহিত্র। তার বংশধররা কিছুই ভোগ করতে পারবে না। ক্রুদ্ধ পঞ্চরঙ্গ গোপন চিঠি পাঠালেন একমাত্র দৌহিত্রকে খুনের জন্য। কিন্তু সেই চিঠি গিয়ে পড়ে দৌহিত্রের হাতে। ক্রুদ্ধ দৌহিত্র মামাবাড়ির ওপর আক্রমণ চালিয়ে সকলকে নিধন করে। একটি পুকুরের মধ্যে সকলের মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হয়। সেই পুকুরটি ছিল দীর্ঘকাল মানুষের আকর্ষণ। পঞ্চরঙ্গ তখন বৃদ্ধ। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে গৌড়েই থেকে যান। তার মুসলমান পত্নীর গর্ভজাত পুত্রদের বেলফুলিয়া পরগণায় কাজির পদ ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তাদেরই বসতবাড়ির ভগ্নস্তূপ মানুষের বিস্ময় জাগাতো ।

তথ্যসূত্র (যশোহর-খুলনার ইতিহাস: কমল চৌধুরী) 

Previous Post Next Post