ঈশ্বরীপুর/ধূমঘাট

এ সম্পর্কে সতীশচন্দ্রের বিস্তৃত আলোচনা আছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় ঈশ্বরীপুর থানা সদরের প্রায় ৫ মাইল দক্ষিণে যমুনা ও ইছামতীর মিলিত স্রোত কদমতলী নামে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত। এই নদী রেখার পশ্চিমতীরে ঈশ্বরীপুর-ধূমঘাট। একদা সুন্দরবনের এই এলাকাটি ছিল গভীর জঙ্গলময়। এখানে একটি ছোট রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন শ্রীহরি এবং তার ভাই বসন্তরায়। শ্রীহরি রাজা হওয়ার পর নাম হয় বিক্রমাদিত্য। তার পুত্র প্রতাপাদিত্য। সুন্দরবন অঞ্চলের বিস্তৃত এলাকায় ছিল তাদের রাজত্ব। যশোরও ছিল তাদের রাজ্যভুক্ত। প্রতাপাদিত্যর পুত্র উদয়াদিত্য ঈশ্বরপুরের উত্তর-পূর্বে সালকায় একটি দুর্ভেদ্য দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। বিক্রমাদিত্য, বসন্তরায়, প্রতাপাদিত্য তাদের রাজ্য সীমায় অসংখ্য মন্দির, দুর্গ ও প্রাসাদ নির্মাণ ও জলাশয় খনন করেন।


শ্রীহরি ও বসন্তরায় প্রথমে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার মুকুন্দপুরে দুর্গ ও রাজবাড়ি নির্মাণ করেন। পরে মুকুন্দপুরের ৮/১০ মাইল দক্ষিণে ঈশ্বরীপুর-ধূমঘাটে প্রতাপ রাজধানী ও দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন।

“প্রতাপাদিত্যের সময় রাজধানী ঈশ্বরীপুরকে কাশী বলা হইত; রাজধানীর শহরতলী প্রভৃতি পূর্ব দিকে কপোতাক্ষী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। উপরে বর্ণিত গোপালপুরে একটি প্রকাণ্ড দীঘি আছে, উহাকে মণিকর্ণিকা বলা হইত। কাশীর অপর পারে স্থিত ব্যাসকাশীর বা বেদকাশীর অনুকরণে কপোতাক্ষীর অপর পারকে বেদকাশী বলা হইত। এখানে যে সকল মন্দির ছিল তাহার অবশেষ একমাত্র ৬/৭টি চমৎকার প্রস্তরস্তম্ভ বর্তমান। এখানে 'কালী খালাস খাঁ' নামে একটি প্রকাণ্ড দীঘি আছে, ইহা দৈর্ঘ্যে ১,০০০ ফুটের উপর, প্রস্থে ৬০০ ফুট। বেদকাশী ঈশ্বরীপুর হইতে পূর্বদিকে ১২/১৪ মাইল হইবে এবং সুন্দরবনের ২১১নং লাটে অবস্থিত। এই স্থানে প্রতাপাদিত্যের একটি দুর্গ ছিল, তাহার ভগ্নাবশেষ দেখিতে পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকের নিকট ইহা “বড়বাড়ী” নামে পরিচিত। ইহা দৈর্ঘ্যে ২২৫০ ফুট ও প্রস্থে ১২০০ ফুট।” (বাংলার ভ্রমণ। অখণ্ড সংস্করণ। পৃঃ ১৪৯)।


ঈশ্বরীপুরের ৩ মাইল দূরে ৪টি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন প্রতাপাদিত্য। তার একটিতে যে গোবিন্দ বিগ্রহ ছিল, মন্দির ভেঙে পড়ায় সেই বিগ্রহ এনে রাখা হয় কার্টুনিয়া গ্রামে। এখানকার দোল উৎসব ছিল বিখ্যাত । এই গ্রামে বসন্ত রায়ের উত্তরপুরুষদের বসবাস ছিল দীর্ঘকাল।

সংগ্রহঃ (যশোহর-খুলনার ইতিহাস : কমল চৌধুরী)

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন