নান শব্দের অর্থ 

নান<ফারসী নান্ থেকে এসছে।  নান শব্দের অর্থ  রুটি, খোরাক, খোরাক বাবদ ভূমি । এবং মধ্যভারতীয় আর্য নানক মানে, মুদ্রা, খুচরা মুদ্রা, আনা।এই শব্দ যুক্ত নামগুলি গঙ্গা-দামোদর পরিসরে অর্থাৎ বর্ধমান, হুগলী ও ঐ জেলার সংলগ্ন ঘাটাল অঞ্চল এবং হাওড়া জেলার বাইরে মেলে না। নামগুলি এই :

বইনান ( >বোইনান ) বাইনান,  বানান,পাউনাম,  পুই- নান আয়নান, খড়িনান, খাজুনান, পাতিনান, নইনান । এগুলির সঙ্গে ‘বাগনান' এবং 'খন্যান’ও ধরা চলে ।


বইনান, বাইনান ( <ফারসী বায়, মানে উপযুক্ত )। বাইনান, বইনান মানে 'কাজের উপযুক্ত পুরস্কার রূপে দেওয়া মহল' ।‘বাবনান’ বাইনানের রূপান্তর হতে পারে (  বাউনান ) । না হলে < ফারসী বাব, মানে অতিরিক্ত কর । ‘পাইনান' ও 'পাউনান' একই মূল নামের দুটি রূপান্তর হতে পারে। মূল নাম <‘পাদিক’, অর্থাৎ পাই কিংবা পোয়া । হুগলী জেলায় পাউনান গ্রামের পাশেই ‘সাতমাথা' গ্রাম আছে। রামদাস আদকের ধর্মমঙ্গলে 'সাতমাষা পাউনান' উল্লিখিত আছে। “মাষা” থেকে 'নান'-এর অন্য অর্থ ‘নানক’, সহজেই কল্পনা করা যায়। ‘পুইনান' ফারসী ‘পই’, ‘পয়’ থেকে আসা সম্ভব। মানে, নিম্ন পদস্থ ব্যক্তি। নামটি পাইনান থেকে আসতে পারে, 'পয়নান' থেকেও আসতে পারে। 'আমনান' এসেছে আরবী 'আমন' থেকে। মানে নিরাপত্তা, শাস্তি, আরক্ষা, ক্ষমা,  অনুগ্রহ । ‘খাজুনান' আগত ফারসী ‘খাজ’ থেকে । মানে 'বিশিষ্ট ব্যক্তি'। পাতিনান নামে 'পাতি' বাংলা শব্দ, মানে ‘সাধারণ, বিশিষ্ট নয়’। খড়িনানও তাই। খড়ি' মানে অনুর্বর ভূমি। ‘নইনান' এসেছে সম্ভবত ফারসী 'নাহ্' থেকে। মানে বাঁশী-বাজন দারকে বখশিশ দেওয়া ভূমি ‘বাগনান' নান যুক্ত নাম হলে প্রথম পদ ফারসী (তুর্কী ) ‘বাগ’, মানে বাগান । নতুবা নামটি ‘বাগ’ শব্দের ফারসী বহুবচন ‘বাগোয়ান’


তথ্যসূত্রঃ বাংলা স্থাননাম - সুকুমার সেন

Previous Post Next Post