নগর

এ দেশ ইট-পাথরের দেশ নয়, মাটির, কাঠের, বাঁশের দেশ । তাই বাংলায় প্রাচীন শহর বা গ্রামে নগর শব্দটি খুব কম পাওয়া যায়।যখন দেশের শিক্ষার প্রসার ঘটতে থাক অর্থাৎ  ১৫-১৬ শতাব্দী থেকে, ‘নগর' শব্দটি ব্যবহৃত হতে থাকে। যেমন, বরানগর, কোন্‌নগর ( < কোণ + ),  জান্নগর ( ফারসী জাহান + ),  বড়নগর,কৃষ্ণনগর, টাটানগর ইত্যাদি ।

নগর কাকে বলে?

প্রাচীন কালে 'নগর' বলতে পাথরের বা ইটের তৈরি দালান কোঠা  সংবলিত ধনী অথবা রাজা বা দেবতা অধিষ্ঠিত প্রাচীর ঘেরা গ্রামকে বোঝাতো।পরে নগর শব্দের সাথে ধর্মীয়  প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয় যেমন, ইটেগাঁথা শিবালয় অথবা দেবালয় বিশিষ্ট গ্রামকে নগর বলা হতো। নগরে দেবালয়  ও ইট নির্মিত দালান থাকবেই। যেমন ভারতচন্দ্রের উক্তিটি নিশ্চয় জানেন  “নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়?” মুকুন্দ কবিকঙ্কণ নিজের গ্রামকে বলেছেন “শিবের নগরী”।

বঙ্গদেশে প্রাপ্ত প্রাচীনতম উৎকীর্ণ শিলালেখে যে একটি স্থাননাম পাওয়া গেছে তাতে ‘নগর' শব্দটি আছে। অধুনা যে অঞ্চল বাংলা- দেশের অন্তর্গত সেখানে, অর্থাৎ আগেকার মধ্যবঙ্গে বোগড়া জেলায় মহাস্থানগড়ের নিকটে একটি ছোট শিলাচক্রলিপি মিলেছে ব্ৰাহ্মী অক্ষরে লেখা প্রাকৃত ভাষায় । লিপিছাদ অশোক শিলালিপির মতোই। সুতরাং লিপিটিকে খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর রচনা বলে ধরে নেওয়া যায় । নামটি হল “পুডনগল”। বিশেষজ্ঞরা ধরে নিয়েছেন, নামটি “পুও নগর” নামের প্রাকৃতরূপ। এই মতের বিরুদ্ধে একটু আপত্তি উঠেছিল এই যে এতে ণ-কারটি নেই। তবে এমন অনুস্বার- বিন্দু লোপের উদাহরণ প্রাচীন লিপিতে প্রচুর আছে। সুতরাং নামটি পুণ্ড্র নগর হওয়ার কথা, কেননা যে গ্রামে পাওয়া গেছে সে স্থানটি পুণ্ড্র ভূমির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। লিপির বিষয় হচ্ছে স্থানীয় ধান্যভাণ্ডার সম্পর্কে।প্রত্নলিপিতে আর একটি নগরঘটিত নাম মিলেছে, পঞ্চনগর ( ৫ শতাব্দী)। এ স্থানও পুণ্ড ভূমির কেন্দ্রস্থলে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন