রাইসুর কবিতায় আমার শৈশব 

"বড়লোকদের সাথে মিশতে চায়" কবিতাটির  লেখক,  ব্রাত্য রাইসু। কবি তার কবিতায় বেশিরভাগ মানুষের মনের কথাগুলো খুব সরলভাবে তুলে ধরেছেন।কবিতাটি আমার ভালো লেগেছে।আমার জীবনের কিছু ঘটনার সাথে এই কবিতার চাওয়াগুলোর মিল পাওয়া যায় ।তখন আমি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি (২০০৫ সালে)।বৃত্তি পরীক্ষা দিতে প্রথম শহরে আসি।একজন শিক্ষক আমাদেরকে ভ্যানে করে পরীক্ষার কেন্দ্রে নিয়ে এলেন।আমরা দাঁড়িয়ে আছি।একটি প্রাইভেট কার এসে আমাদের পাশে দাঁড়ালো।সমবয়সী একটি মেয়ে গাড়ি থেকে নামলো। টপ আর জিন্স পরা।আমি অপলক  তাকিয়ে ছিলাম।আমার বান্ধবীরাও তাকিয়ে দেখছিল তাকে।এই প্রথম সমবয়সী কাউকে গাড়ি থেকে নামতে দেখলাম।বড়লোকদের সবকিছু সুন্দর হয়।চুলের কাটিং,জামা-কাপড়, হাঁটা-চলা,বই ধরা ও উল্টানো এমনকি থুতু ফেলা পর্যন্ত দেখতে ভালো লাগে। কেন এত ভাল লাগে?অথচ আমার বান্ধবীদের চেহারাতো কম সুন্দর ছিল না! 

শহর ছেড়ে আমাদের গ্রামের  একটি ধনী পরিবার গ্রামে বসবাস শুরু করলো।আমাদের বাড়ির পাশে।ঐ বাড়িতে একটি সুন্দরী  মেয়ে ছিল।প্রায় সমবয়সী। তাদের গাড়ি ছিল।বাইরে কম বের হতো।আমরা তাদেরকে তাকিয়ে দেখতাম।আমাদের সাথে মিশতে চাইতো না।দূর থেকে তাকিয়ে আমাদের খেলা দেখতো।তারপর ধীরে ধীরে তারা সম্পদ হারাতে শুরু করলো।আমরা তাদের থেকে বড়লোক হতে থাকলাম।তারপর তারা আমাদের সাথে মিশতে চাইলো। তৈরি হলো বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব হওয়ার পর মেয়েটিকে আর আগের মত সুন্দরী মনে হয় নি।হয়ত আমাদের শ্রেণীতে ফিরে আসার কারণে।

 ছোটকালে আমিসহ আমার চাচাতো ভাই-বোনেরা দাদীর কাছে ঘুমাতাম। দাদী গল্প শোনাতো।রাজকন্যার গল্প।সুন্দরী রাজকন্যা। শিশু মন রাজকন্যা খুঁজে বেড়াতো।ভাবতাম  রাজকন্যারা কি শহরে দেখা ঐ মেয়েটির চেয়ে সুন্দর?কিংবা উত্তর পাড়ার মসজিদের ইমাম যে জান্নাতী হুরের বর্ণনা দিয়েছিল তার চেয়ে সুন্দর?  

বড় হওয়ার পর শখের বশে রাজকন্যাদের ছবি সংগ্রহ শুরু করি। শ'খানেক রাজকন্যা। ভালো লাগে নি।হয়তো ক্লিওপেট্রার আসল চেহারা দেখতেও সুন্দর ছিল না।অন্তত ছবির মত নয় ।দাদীর গল্পের রাজকন্যাকে আমি কোথাও পায় নি।পাওয়া যাবে না।এমনকি বলিউড, হলিউডেও না। বিটিভিতে  বাংলা সিনেমা দেখতাম। চৌধুরী সাহেবের মেয়ের চরিত্রে যারা অভিনয় করতো ভাবতাম, হয়তো এরাই সেই রাজার কন্যা।বড় হয়ে দেখি এরাও আমাদের শ্রেণির। সবই মেকি।বাংলা সিনেমার সেকল স্বপ্নের নায়িকারা এখন মূল্যহীন। 

কবি রাইসুর মতে বড়লোক কারা আমি তা জানি না।বড়লোকদের মাখন খাওয়া মেয়েরা দাদীর গল্পের রাজকন্যার মত সুন্দরী নয় নিশ্চয়।কিংবা হিমুর রুপা অবাস্তব।  এখন আমি বড় হয়েছি।অর্থ বিত্তে নয়।মগজে বড়। বড়লোকরা কেন বড়লোক তা আমি জানি।ছোটলোকরা কিভাবে নব্য ধনী হচ্ছে সেটাও জানি। এখন আমি বড়লোকদের সাথে মিশতে চায় না।মেশার স্বপ্ন জাগে না।হয়তো পুঁজিবাদ বিরোধী মগজ সকল অসৎ বড়লোকদের প্রতি রুচি হারিয়েছে। তবে বড়লোকরা কি খায় এখনো তা জানার আগ্রহ আছে আমার। তাদের বেডরুম দেখতে  কেমন?  তারা কি বারান্দা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে?  বড়লোকরা কি ছাদে উঠে আকাশের চাঁদ দেখে?  তারা কিসের অভাব অনুভব করে  তা এখনো জানতে আগ্রহী  আমি। বড়লোকরা কিভাবে বড়লোক হলো  এটা জানতে আমি খুব বেশি আগ্রহী। 

আরো পড়ুন 

বুদ্ধিজীবী ব্রাত্য রাইসু


ব্রাত্য রাইসুর বড়লোকদের সাথে মিশতে চাওয়া
ব্রাত্য রাইসু


Previous Post Next Post