মহাভারতের কাহিনী 

কেন মহাভারতের যুদ্ধ হয়েছিল? 

কুরুবংশে ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডু নামে দুই ভাই জন্মগ্রহণ করেন।ধৃতরাষ্ট্র বড় ও পাণ্ডু ছোট। কিন্তু বড় ভাই জন্মান্ধ ছিলেন তাই  ছোট ভাই পান্ডু রাজা হন। ধৃতরাষ্ট্রের একশত ও পাণ্ডুর পাঁচটি পুত্র ছিল। ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের নাম দুর্য্যোধন, দুঃশাসন ইত্যাদি এবং পাণ্ডুর পুত্রদের নাম যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব। ধৃতরাষ্ট্রের পুত্ররা কৌরব ও পাণ্ডুর পুত্ররা পাণ্ডব নামে খ্যাত। পাণ্ডুর দুই স্ত্রী ছিল, কুন্তী ও মাদ্রী যুধিষ্ঠির, ভীম ও অর্জুন কুন্তীর পুত্র, এবং নকুল ও সহদেব মাদ্রীর পুত্র । কৌরবদের মাতার মান গান্ধারী ছিল। পান্ডু রাজা হলেও বেশিদিন রাজত্ব করতে পারেন নি। তার মৃত্যুর পরে পাণ্ডবেরা সকলে ধৃতরাষ্ট্রের আশ্রয় গ্রহণ করেন। ধৃতরাষ্ট্র নিজের শত পুত্র ও ভ্রাতুলদের শিক্ষার ভার দ্রোণাচার্য্যের হাতে দিলেন । বীর দ্রোণ অতি যত্নের সাথে রাজপুত্রদের অস্ত্রশিক্ষা দিতে লাগলেন; এবং কিছু দিনের মধ্যে দেখতে পেলেন যে, অস্ত্র-শিক্ষায় অৰ্জ্জুনের সমকক্ষ আর কেউ নেই । কাজেই অর্জুন দ্রোণের অতি প্রিয় হয়ে উঠলেন । ভীমের শরীরে অত্যন্ত বল ছিল; তাঁর সাথে বলে কেউ পারতো না; এক ভীমের জ্বালায় শত কৌরব অস্থির হয়ে উঠতো। কাজেই ভীমকে সকলে ভয় করতো। কৌরবদের শরীরে বল থাক আর নাই থাক, দুষ্ট বুদ্ধিতে কেউ তাদের সমান ছিল না । তারা সর্বদা পাণ্ডবদের অনিষ্ট করার চেষ্টা করতো। একদিন সকালে কৌরবরা সবাই মিলে ভীমকে কৌশলে বিষ খাওয়ানোর পর তাকে পানিতে ডুবিয়ে মারতে চেয়েছিল।পারে নি।।শেষে পাঁচ ভাইকে মেরে ফেলার জন্য একটি পরিকল্পনা করলেন দুর্য্যোধন। পাঁচ ভাইকে ঘরের মধ্যে আটকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা করে কিন্তু পাণ্ডবেরা তার আগেই সেটা জানতে পারে। তারা আত্মগোপন করে। দুৰ্য্যোধন  ভাবলো পান্ডবদের নিপাত হয়েছে।কিন্তু  পঞ্চ পাণ্ডব ব্রাহ্মণের বেশে লুকিয়ে ছিলেন। ইতোমধ্যে দ্রুপদ রাজার কন্যা দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর এর আয়োজন করা হলো। আকাশে মাছ থাকবে, নীচে জলের ভিতর ছায়া দেখে, যে সেই মাছের চোখে তীর মারতে পারবে, সেই দ্রৌপদীকে বিয়ে করবে। দেশ দেশান্তরের অনেক রাজা ও রাজপুত্র উপস্থিত হলো। একে একে সকলেই চেষ্টা করলো, কিন্তু কেউ মাছের চোকে বাণ বিদ্ধ করতে পারল না।তখন ব্রাহ্মণ-বেশধারী অৰ্জ্জুন সফল হলেন। সভার মধ্যে চারিদিকে শোরগোল  পড়ে গেল। প্রথমে অৰ্জ্জুনকে কেউ চিনতে পারে নি, শেষে পাণ্ডবদের পরিচয় প্রকাশ পেল। মহাভারতে এরূপ লেখা আছে যে, তাঁরা পাঁচ ভাই মিলে দ্রৌপদীকে বিবাহ করেছিলেন।ধৃতরাষ্ট্র তখন পাণ্ডবদের  ডেকে অর্ধেক রাজ্য ভাগ করে দিলেন, হস্তিনাপুর তাঁদের রাজধানী হলো ৷ যুধিষ্ঠির রাজা হলেন। পাণ্ডবদের যশ ও খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। আবার দুর্যোধনের হৃদয় হিংসায় ফেটে  যেতে লাগলো। আবারো পাণ্ডবদের সর্বনাশ  করার  উপায় খুঁজতে থাকলেন।। দুৰ্য্যোধনের এক মামা ছিলেন তার নাম শকুনি । সেই শকুনির পরামর্শে যুধিষ্ঠিরকে পাশা খেলায় নিমন্ত্রণ করা হলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও যুধিষ্ঠিরকে খেলতে হলো। পাশায় ক্রমাগতই হারতে থাকলেন। ধন সম্পদ রাজ্য, একে একে সবই হারালেন। নিজ ভ্রাতাদের পণ রাখলেন, সেটাও হেরে গেলেন।নিজেকে ও নিজের স্ত্রীকে পণ রেখেও হারলেন।দূর্য্যোধন সুযোগ বুঝে  দ্রৌপদীকে রাজসভায় অপমানিত করলেন। ১২ বছরের জন্য পান্ডবরা দ্রৌপদীকে নিয়ে বনে চলে গেলেন। বারো বছর বনবাস ও এক বছর অজ্ঞাতবাসের পরে আবারো ফিরে এসে রাজ্য চাইলেন। দুর্য্যোধন বিনা যুদ্ধে রাজ্য দিতে অস্বীকার করেন।পানিপথের কাছে কুরুক্ষেত্রে আঠারো দিন যুদ্ধ হয়।যুদ্ধে কৌরবদের সব বীর মারা যায়। রক্তে  রঞ্জিত হয়ে যায় কুরুক্ষেত্রের মাঠ।শ্মশানে পরিণত হয় চারিদিক।বিধবাদের কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আকাশ। যুদ্ধের ৩৬ বছর পর শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু হয়।যুধিষ্ঠির শোকাহত হউন। যুদ্ধের প্রাণহানির শোক ও কৃষ্ণের শোক সহ্য করতে না পেরে স্ত্রী ও ভাইদের নিয়ে যুধিষ্ঠির রাজ্য ছেড়ে হিমালয়ের দিকে রওনা দেন।

মহাভারতের যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস




নবীনতর পূর্বতন