নদীয়ার মহকুমা চুয়াডাঙ্গার বৃটিশ আমল


 চুয়াডাঙ্গার নামকরণ কিভাবে হলো? 

গ্রীক ঐতিহাসিকদের মতে এ এলাকাতে বিখ্যাত গঙ্গারিডাই  শহর ছিল। নদীয়ার মুর্শিদাবাদ থেকে চুঙ্গো মল্লিক নামের একলোক সপরিবারে এখানে এসে বসতি গড়ে।ধারণা করা হয় তার নামানুসারে জেলার এই নাম।১৭৯৭ সালের এক রেকর্ড অনুযায়ী জায়গাটির নাম ছিল চুঙ্গোডাঙ্গা।পরে নাম পরিবর্তন হয়ে চুয়াডাঙ্গা নামকরণ হয়েছে। তো আমরা এখন জানবো শতবর্ষ পূর্বে চুয়াডাঙ্গার অবস্থা কেমন ছিল? বৃটিশ ভারতে চুয়াডাঙ্গার আর্থসামাজিক অবস্থা কেমন ছিল? 

বৃটিশ আমলে চুয়াডাঙ্গা কেমন ছিল?

আজ হতে ১১২ বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৯১১ সালে চুয়াডাঙ্গা মহকুমা ছিল ৪৩৭ বর্গমাইল। তখন জনসংখ্যা ছিল ২৫৪৫৮৯ জন। এর মধ্যে লিখতে ও পড়তে জানতেন ১০২৬৭ জন লোক।আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা, মুন্সিগঞ্জ, নীলমনিগঞ্জ এই মহকুমার অন্তর্ভুক্ত ছিল।  চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, দামুরহুদা ও জীবন নগর এই চারটি থানার গ্রামগুলো  ৫৩ টি চৌকিদারি ইউনিয়নে বিভক্ত ছিল।বৃটিশ আমলে চুয়াডাঙ্গায় ৭৫ শতাংশ লোক কৃষি কাজ করতো শতকরা ১২ জন দিনমজুর, শতকরা ৮ জন ব্যবসায়ী ও কর্মচারী এবং শতকরা ৫ জন ছিল কারিগর। ১৮৬৩ সালের পূর্বে চুয়াডাঙ্গা কোন মহকুমা ছিল না। ১৮৬২ সালের পূর্বে দৌলতগঞ্জে (জীবননগর) একটি মুনসেফি চৌকি ছিল।মুনসেফি চৌকিতে  মামলার  বিচার করা হতো।আর ১৮৬৯ সালের দিকে একজন জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট ও কয়েকজন ডিপুটি কালেক্টর দিয়ে দামুরহুদায় একটি কাছারি তৈরি হয়।১৮৬২ সালের দিকে জীবন নগর থেকে রেল স্টেশন তৈরি হওয়ায় মুনসেফী চৌকি চুয়াডাঙ্গাতে চলে আসে।১৮৯২ সালে স্যার চার্লস ইলিয়ট চুয়াডাঙ্গা মহকুমা বাদ দিয়ে মেহেরপুরে অন্তর্ভুক্ত করে।আবারো ১৮৯৭ সালে চুয়াডাঙ্গাকে মহকুমা বানানো হয়।


বৃটিশ ভারতে চুয়াডাঙ্গার আর্থসামাজিক অবস্থা 

বৃটিশ ভারতেকালে  চুয়াডাঙ্গার মাটি তেমন উর্বর ছিল না।বন্যায় পলি না জমা ও জমিতে সার না দেয়া এটার অন্যতম কারণ ছিল। ১৯ শতকের পূর্বে আশানুরূপ ফসল না হওয়ায়  কৃষকেরা জমি বছর বছর ফেলে রাখতো।জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও আবাদি জমি কমে যাওয়ায় ফেলে রাখা সম্ভব হতো না। ১৯১০ সালের এক জরিপ অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গার কৃষক প্রতি বিঘা জমিতে যে ফসল পেতেন, 

প্রতি ১ বিঘা জমিতে ৩ মণ আউস ধান হতো।পাট হতো মোটে তিন মণ।তিসি হতো ১ মণ আর ছোলা হতো ২ মণ করে। চুয়াডাঙ্গা মহকুমার কৃষকেরা সারা বছর  মহাজনদের নিকট ঋণগ্রস্ত হয়ে থাকতো। কৃষক নিজের জমিতে ভাড়ায় লোক খাটালে তেমন লাভ থাকতো না।১৯১১ সালে দিকে এক বিঘা জমির মূল্য ছিল ৫-৭ টাকা। সেসময় পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারে বছরে শুধুমাত্র খোরাকী বাবদ খরচ হতো  ৩০০-৩২০ টাকা।একজন কৃষককে বছরে ৩২০ টাকা আয় করতে হলে ৩২ বিঘা জমির মালিক হতে হবে।কিন্তু সবারতো তা ছিল না। ফলে লোকে চাষের খরচ কমানোর জন্য ফুরাণ নিয়ে কাজ করতো।একে অপরের কাজ সময় পেলে করে দিতো।একজন সাধারণ দিনমজুরের দৈনিক আয় ছিল ১০ পয়সা।পাটের চাহিদা বাড়ায় চুয়াডাঙ্গায় পাট চাষ বাড়তে থাকে। পাটের কারণে চুয়াডাঙ্গার কৃষকের ভাগ্যের কিছুটা পরিবর্তন হয়। পাট কাটতে ফুরাণ দেয়া হতো।ফলে একজন দিনমজুর দিনে ২-৩ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারতো। মধ্যবিত্ত পরিবার ও দিনমজুরদের অবস্থা খুবই  খুবই খারাপ ছিল যেখানে মাসে ৬০ টাকা খরচ অথচ আয় হতো ৪০-৫০ টাকা। কুমারী, বেলগাছী ও মমিনপুরে তাঁতের কাছ বেশি হতো।মাথাভাঙ্গা নদী ও আলমডাঙ্গার কুমার নদ (অপর নাম পাজলি) দিয়ে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হতো।


বৃটিশ আমলে চুয়াডাঙ্গায় দুর্ভিক্ষ 

বৃটিশ আমলে চুয়াডাঙ্গা মহকুমায় দারিদ্র্যের হার বেশি থাকলেও তেমন বড় ধরনের দুর্ভিক্ষ হয় নি। সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষটি হয়েছিল ১৮৬৫-৬৬ সালের দিকে।অন্যরা কেড়ে খেয়ে নিবে এই ভয়ে তখন বাইরে কেউ কোন খাবার রাখতো না, খেত না।১৮৮৯, ১৮৯৭ ও ১৯০৬ সালে চুয়াডাঙ্গা মহকুমায় অল্প পরিসরে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। সামান্য সাহায্যে লোকে তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল।তবে  ১৮৭১-৭২ সালে চুয়াডাঙ্গায় ব্যপক বন্যা হয়েছিল। সেসময় রেল লাইন ভেঙে পড়েছিল।


তথ্য: সূত্র নদীয়ার কাহিনী (চুয়াডাঙ্গা মহকুমা) 


বৃটিশ ভারতে চুয়াডাঙ্গা যেমন ছিল


Previous Post Next Post