বৃটিশ ভারতে মেহেরপুর জেলা

 মেহেরপুর জেলার আদি ইতিহাস 

মেহেরপুর বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক জেলা।বৃটিশ ভারতে মেহেরপুর নদীয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তখন মেহেরপুরকে  গ্রাম বলা হত। মেহেরপুরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদ।১৯১১ সালের দিকে মেহেরপুরে  আনন্দ বাজার, কালী বাজার, বৌ বাজার ও বড় বাজার নামে চারটি অতি  পরিচিত বাজার সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকে মনে করেন রাজা বিক্রমাদিত্য এর সময় মেহেরপুর গ্রাম সৃষ্টি হয়েছিল।যদিও  বিষয়ে তেমন অকাট্য প্রমান পাওয়া  যায় না। আবার অনেকে বলেন, মিহির খানার বাসস্থান ছিল এই মেহেরপুরে।তার নামানুসারে মিহিরপুর পরবর্তীতে অপভ্রংশ হয়ে মেহেরপুর নামকরণ করা হয়েছে। বহুকাল পূর্বে মেহেরপুরে গোয়ালা চৌধুরী পদবী ভূষিত বিখ্যাত বংশ এখানে বসবাস করতো। চৌধুরী বংশের প্রধান ছিলেন রাজা রাঘবেন্দ্র। বাঘবেন্দ্রর জমির কোবলা, দানপত্র, সনদ, স্বাক্ষর ইত্যাদি কাগজপত্র দেখে তাই মনে হয়। তো সেই সময় বঙ্গে বর্গীর উৎপাত বাড়তে থাকে।এরইমধ্যে মহারাষ্ট্র নেতা রঘুজীর সাথে রাঘবেন্দ্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রাঘবেন্দ্র বংশ নির্মূল হয়ে যায়।পরে এখানে কেউ বসবাস করতো না।১৮৬৯ সালে প্রথম মেহেরপুরে মিউনিসিপিলটি হয়। রাণী ভবানী যখন রাজপুর পরগনার অধিকারী হলেন তখন মেহেরপুর তার অধীনে চলে যায়।রাণী ভবানী থেকে মেহেরপুর চলে যায় রাজা হরিনাথ কুমারের অধীনে। পরবর্তীতে হরিনাথের পুত্র রাজা কৃষ্ণনাথ মেহেরপুরকে জেমস হিল নামে এক নীলকুঠিয়ালকে কাগজপত্র করে দেন। জেমস হিল প্রজাপীড়ন করতেন।প্রজাদের উপর নিষ্ঠুর আচরণের জন্য জমিদার গজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সাথে বিবাদ তৈর হয়।গজেন্দ্রনাথের ছয় পুত্র সন্তান ছিল।সেসময় নদীয়াতে ১২০ টি নীল কুঠির ছিল তাদের অধীনে। গজেন্দ্র নাথ ও তার বড় ছেলে ঘনশ্যাম এর মৃত্যুর পর কুঠিগুলো ছয়ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।গজেন্দ্রনাথের দ্বিতীয় ছেলে  গোলকের তিন ছেলে মধুরা লাল, রামচন্দ্র ও নবকৃষ্ণ  তাদের নিজ নিজ নীলকুঠি পরিচালনা করতে থাকে। ১৮৪১ সালে জেমস হিল মেহেরপুরকে নিজ দখলে নিলে মধুর লালের সাথে বিবাদ দেখা দেয়।মথুর লাল এক রাতে ৪০ বিঘা জমি ঘিরে নেন।পরে তার পশ্চিমে একটি পুকুর ও ঘর নির্মান করে নিজ জমি দখলে নেন।মথুর লালের ভাই নবকৃষ্ণসহ মুখোপাধ্যায় বংশের অন্যরা মিলে জেমস হিলের সাথে মোকাবিলা করেন।মথুর লালের মৃত্যুর পরে তার ভাই নবকৃষ্ণ  দায়িত্ব গ্রহণ করেন।সে একাই জেমস হিলের বিরুদ্ধে লড়াই করেন।যাতে জেমস হিল মেহেরপুর দখল করতে না পারেন। ১২ বছর মুখোপাধ্যায় বংশ মেহেরপুরকে দখলে রাখেন।একসময় বংশের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।এ সুযোগে জেমস হিল   মথুর লালের পুত্র চন্দ্রমোহনকে   প্রভাবিত করেন।অর্থ উপহার দেন।ফলে মুখোপাধ্যায় বংশ দূর্বল হয়ে যায়।  নবকৃষ্ণের মৃত্যুর পর যোগ্য লোক না থাকায় ১৮৫৩  সালে জেমস হিল মেহেরপুর  দখলে নেন।শুরু হয় প্রজাদের উপর নতুন করে  নির্যাতন।

মুখোপাধ্যায় বংশের রাজত্বকালে কৃষ্ণকান্ত মল্লিক নামে এক জমিদার মেহেরপুরে এসে বসতি গড়ে। কৃষ্ণকান্তের ছেলে নন্দকুমার লক্ষাধিক টাকার জমিদারি করেছিলেন।মেহেরপুরে মূলত মুখোপাধ্যায় বংশ ও মল্লিক বংশের দূর্দান্ত প্রতাপ ছিল।এই দুই বংশের অধীনে তখন ৪০০ ব্রাহ্মণ পরিবার, শতাধিক কায়স্থ পরিবার, পঞ্চাশ ঘর বৈদ্য ও অসংখ্য ঘর নবশাখা ও অন্যান্য জাতি বসবাস করতো। ১৮৫০ সালের দিকে অর্থাৎ ১২৬০ সালের জৈষ্ঠ্য মাহার মহামারীতে অনেক লোকের মৃত্যু হয়।মেহেরপুর প্রায় লোকশূন্য হয়ে পড়ে।১৮৫৮ সালে মেহেরপুরকে মহকুমা করা হলে লোকসংখ্যা বাড়তে থাকে। 


বৃটিশ ভারতে মেহেরপুর জেলা


Post a Comment

0 Comments