প্রাচীন বিদ্যাকেন্দ্র তক্ষশীলা

ভারতের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহাসিক আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম তক্ষশীলা। পৃথিবীট বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করতে আসতো। ব্যাবিলিওন, সিরিয়া, ফিনিশিয়া, চীন দেশের শিক্ষার্থীরা এ শিক্ষাগ্রহণ করতে আসতো। তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে মূলত অষ্টাদশবিদ্যা ও ত্রিবেদ পড়ানো হতো। অষ্টাদশ বিদ্যা বলতে বেদাঙ্ক,  দর্শন,  পুারাণ, স্মৃতি, আয়ুর্ব্বেদ, ধনুর্ব্বেদ, গন্ধর্ববেদ, অর্থশাস্ত্র, গজশাস্ত্র ইত্যাদি শাস্ত্রকে অষ্টাদশবিদ্যা বলা হয়। ত্রৈবেদ বলতে সামবেদ, ঋগ্বেদ ও যজুর্বেদকে বোঝায়।গ্রীকরা তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়ুর্বেদ নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য আসতো । বারাণসী, মিথিলা, ইন্দ্রপ্রস্থ, মগধ, কোশল, দাক্ষিণাত্য প্রভূতি ভারতে নানা দেশের রাজপুত্র, পুরোহিত, ধনী ব্যক্তির সন্তানরা এখানে পড়াশোনা করতে আসতো মহাভারতের আদি পর্বে তক্ষশীলার নাম উল্লেখ আছ। বলা হয়েছে  জর্ন্মেয়জয় তক্ষশীলা দখল করেছিলেন। আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণের কিছুকাল পরে গ্রিক সেনাপতি সেলিউকস তক্ষশীলা প্রদেশ দখল করে। 


তক্ষশীলার নামকরণের ইতিহাস 

তক্ষশীলার নামকরণ নিয়ে মতভেদ আছে পাশ্চাত্য তত্ত্ববিদরা বলেন তক্ক জাতি কর্তৃক তক্ষশীলা স্থাপিত হওয়াই এর নাম তক্ষশীলা হয়েছে। কারণ "তক" জাতির পুরুষদের  "তক্ক" বলা হতো।কিন্তু অনেকে একমত নয়। কেউ কেউ বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পন্ডিতগন এখানে এসে তর্ক-বিতর্ক করতো সেইসূত্রে এর নাম তক্ষশীলা। গ্রীকরা তক্ষশীলাকে "টেকজিলা" বলতো।


হারিয়ে যাওয়া তক্ষশীলার অবস্থান 

প্লিনির মতে প্রাচীন পুষ্পলাবতী বা হস্তনগর থেকে ৫৫ কিলোমিটার পূর্ব দিকে তক্ষশীলার অবস্থান ছিল। অনেকে এই মতের সাথে একমত নয়। ফা- হিউয়েন সাং এর মতে সিন্ধু নদী হতে পূর্ব দিকে তিন দিন হাঁটলে তক্ষশিলার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।  এই তথ্যমতে ধারণা করা যায় যে কালকাসাইয়ের নিকট  সাদেরীর বিস্তীর্ণ ধ্বংসাবশেষ এর মধ্যে তক্ষশীলা অবস্থান। খ্রীষ্ট চতুর্থ  শতাব্দীতে হিউয়ান সাং তক্ষশীলায় আসেন ।তিনি এই অঞ্চলকে চু-সা-শিলো বা খন্ডিত মস্তক নামে অবহিত করেছেন। তক্ষশীলা গান্ধার রাজ্যের রাজধানী ছিল। 

ভারতের প্রাচীন  আন্তর্জাতিক শিক্ষাকেন্দ্র


Previous Post Next Post