ঘূর্ণিঝড় (Cyclone) কী?

পৃথিবীতে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগটি সবচেয়ে বেশি আঘাত হানে সেটি হল ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়  উৎপত্তিস্থল সমুদ্র। এবং উপকূলবর্তী দেশ বা অঞ্চল সমূহে সবচেয়ে বেশি আঘাত হানে। প্রশান্ত মহাসাগর উত্তর ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে। সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে নিম্নচাপ ও উচ্চ তাপমাত্রা বায়ুমণ্ডলের নিম্ন ও মধ্য স্তরের অধিক আর্দ্রতা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কর্কট ও মকর ক্রান্তি রেখার কাছাকাছির সমুদ্রগুলোতে গ্রীষ্মকালে বা শেষে  ঘূর্ণিঝড় হয়। 


কোন কোন অক্ষ রেখায় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়? 

 নিরক্ষরেখার কাছাকাছি উষ্ণ ও শীতল বায়ুর বিপরীতমুখী প্রবাহ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্টি হয় নিরক্ষরেখার ১০ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি মধ্যে  ঝড়ের সৃষ্টি  হয় ।কিন্তু করিওলিস শক্তির ন্যূনতম থাকায় নিরক্ষরেখার শূন্য  ডিগ্রি থেকে ৫ ডিগ্রির মধ্যে কোন ঘূর্ণিঝড় হতে দেখা যায় না অর্থাৎ যেসব সাগর ৩০ ডিগ্রি উত্তরে ও ৩০ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত সেসব সাগরের বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি।    উষ্ণ মন্ডলের যে সকল সাগরের অক্ষাংশের ৩০ ডিগ্রি উত্তরে ও অক্ষাংশের ৩০ ডিগ্রি দক্ষিণে অবস্থিত সেখানে ঘূর্ণি ঝড় সৃষ্টি হয় । ঘূর্ণিঝড় কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে ২৮ দিন পর্যন্ত ব্যপ্তি লাভ করতে পারে ।ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাসার্ধ ৫০০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।  

বিশ্বের বিখ্যাত কিছু ঘূর্ণিঝড়

বিশ্বে সংগঠিত মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে আই ভ্যান ১৯৯৭ বিটা ১৯৭৮, ডার্মি ২০০০ লেবার ডে ১৯৩৫ ঘামেই ২০০১ চার্লি ২০০৪,  ক্যাটরিনা ২০০৫ ফেলেক্সি ২০০৭ উল্লেখযোগ্য।  

ঘূর্ণিঝড়ে তীব্রতা প্রভাবের জন্য বিভিন্ন স্কেল ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে স্যাফিরস্পিসনের স্কেলটির সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। 


বাংলাদেশে ঘূর্ণি ঝড় কেন হয়?

বাংলাদেশ উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চল বলে এখানে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বেশি হয়। এবং ট্রপিক্যাল সাইক্লোন খুবই মারাত্মক ও ক্ষতিকারক। বাংলাদেশের আশ্বিন-কার্তিক ও চৈত্র-বৈশাখ মাসে ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়।  বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর কারণে ঘূর্ণিঝড় হয়।

 বাংলাদেশের দক্ষিণে ফানেলাকার এলাকার আকৃতির কারণে অধিক সংখ্যক ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়।


ঘূর্ণিঝড়ের বিভিন্ন নাম


বাংলাদেশ ও ভারতীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বলে । জাপান ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে টাইফুন ফিলিপাইনের ঘূর্ণিঝড়কে বাগুইড বা বোগিও বলে। অস্ট্রেলিয়ায় ঘূর্ণিঝড় কে উইলি উইলি বলে। আমেরিকা ও আটলান্টিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় কে হ্যারিকেন বলে। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় কে জওয়ান বলে 


হারিকেন কী

আটলান্টিক মহাসাগর এলাকা তথা আমেরিকার আশেপাশে ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ১১৭ কিলোমিটারের বেশি হয় তখন জনগণকে সতর্ক করার জন্য হ্যারিকেন শব্দটি ব্যবহার করা হয়। মায়া দেবতা হুরাকান থেকে হারিকেন শব্দের উৎপত্তি। যাকে ঝড়ের দেবতা বলা হয় তার নাম থেকেই হ্যারিকেন শব্দটি এসেছে। 


টাইফুন 

প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা তথা চীন জাপানের আশেপাশে হারিকেনের পরিবর্তে টাইফুন শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ধারণা করা হয় টাইফুন শব্দটি চীনা শব্দ টাইফেং থেকে এসেছে যার অর্থ প্রচণ্ড বাতাস। অনেকে মনে করেন ফার্সি বা আরবি শব্দ তুফান থেকেও টাইফুন শব্দটি আসতে পারে। 

ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তির কারণ ও নামকরণ



Previous Post Next Post