প্রাচীন ভারতীয় উদ্ভিদবীদদের মতে গাছ-গাছালির প্রকারভেদ 

১১ শ শতকে বাংলায় চক্রপাণি দত্ত নামক এক মহাপন্ডিত ছিলেন।তিনি আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ হিসাবে জগৎ জয় করেছিলেন। প্রাচীন গ্রন্থ চরকসংহিতায় চক্রপাণি যে টিকা করেছিলেন তাতে তিনি গাছ-পালাকে বনস্পতি,  বানস্পত্য, ঔষধি ও বিরুধ এই চারভাগে বিভক্ত করেছেন।তিনি উল্লেখ করেছেন যে যেসকল বড় গাছে ফল ধরে কিন্তু ফুল হয় না তারা বনস্পতি।যেমন পাকুড় (প্লক্ষ), যজ্ঞডুমুর ইত্যাদি।  যেকল ফুল ও ফল হয় তারা বানস্পত্য।যেমন আম, জাম,কাঁঠাল ইত্যাদি।   যেসকল গাছে ফল হওয়ার পর গাছ দ্রুত মারা যায় তারা ওষধি যেমন ধান,গম,যব,মোটর ইত্যাদি। আর লতা,ছোট-ছোট ঝোপ-ঝাড় বিশিষ্ট গাছ ও গুল্মকে বলে বিরুধ।

সুশ্রুত ও ডহলন মিশ্রের গ্রন্থেও প্রায় একই কথা লেখা আছে।সেখানো আরো বলা হয়েছে যে যেসকল গাছে ফল ও ফুল হয় তারা বৃক্ষ। 

প্রাচীন আয়ুর্বেদ পন্ডিত প্রশস্ত পাদ তার গ্রন্থে গাছপালাকে ছয়টি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন। যেমন

তৃণ = উলু, খড় ইত্যাদি। 

ওষধি= ধান,গম ইত্যাদি। 

লতা= নরম লতা বিশিষ্ট যা শক্ত কোন কিছু ধরে বাড়ে।যেমন কুমড়া।

অবতান= আম,জাম ইত্যাদি। 

বৃক্ষ = রক্ত কাঞ্চন, সেগুন, মেহগনি ইত্যাদি। 

বনস্পতি = যজ্ঞডুমুর,পাকুড় ইত্যাদি। 


মহাপন্ডিত অমরসিংহ তার লেখা বিখ্যাত অভিধান অমরকোষে  বনের যেসকল গাছ ঔষধ হিসাবে কাজ করে তাকে বনৌষধি আর যেসকল গাছ খাদ্য-শস্য দেয় যেমন ধান,গম,যব এগুলোকে বৈশ্য নামে আখ্যা দিয়েছেন। ঘাস ও লতা জাতিয় গাছকে তৃণ ও বাঁশ গাছকে তৃণধ্বজ এবং নারিকেল, সুপারি, তাল,খেজুর এধরণের ডাল-পালা বিহীন লম্বা সরু গাছকে তৃণদ্রুম নামে উল্লেখ করেছেন।


প্রাচীন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থে ঔষধি গাছের বিবরণ 

২৫০০ বছর পূর্বে ভারতে শুক্রাচার্য নামক এক মহাঋষি ছিলেন।তার লেখা গ্রন্থ নীতিশাস্ত্রে তিনি গাছের গুনাগুন তুলে ধরেন।হিমালয় পর্বত থেকে আরম্ভ করে সমগ্র ভারতের বিভিন্ন গাছ-পালা সম্পর্কে নীতিশাস্ত্রে তুলে ধরা হয়েছে। নীতিশাস্ত্রে গাছ-পালাকে ফলীন ও আরণ্যক এই দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন।আর আরেকভাগে নিত্য ব্যবহার্য গাছের উল্লেখ করেছেন। প্রায় পঞ্চাশ রকম ফল গাছের বিবরণ পাওয়া যায় নীতিশাস্ত্রে।প্রায় চল্লিশ রকমের আরন্যক গাছর বিবরণ আছে।ধান,গম,তিন,সরিষা এমন ২৫ টি খাদ্য শস্যকে শুক্রচার্য তৃতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করেন। 


ভারতীয় প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ অথর্বদ বেদে পিঁপুল, শিমুল,কুল,কুশ, অশ্বথ,বট গাছের বিবরণ পাওয়া যায় । 

চরক সংহিতায় চরক ঋষি প্রায় ৫০০ টি ঔষধি গাছে উল্লেখ করেছেন। উজ্জয়িনিবাসী বরাহমিহির তার লেখা গ্রন্থ বৃহৎ সংহিতায় নিজ দেশের গাছের বিবরণ দিয়েছেন। তবে প্রাচীন গ্রন্থগুলোর মধ্যে শুক্রনীতিতে গাছ লালন-পালন, গাছ লাগানোর পদ্ধতি, গাছের খাদ্য ও সার, গাছের রোগ, সালোকসংশ্লেষন ইত্যাদি বিশদভাবে তুলে ধরেছেন।


প্রাচীন ভারতে গাছের নামকরণ 

উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা গাছের প্রজাতি ও বৈশিষ্ট্যভেদে গাছের বৈজ্ঞানিক নাম তৈরি করেন। ঠিক তেমনি আকৃতি ও আকার দেখে শুক্রচার্যে কিছু গাছে নামকরণ করেন। যেমন অপরাজিতা ফুলের নাম গো-কর্ণ, ধূতরার নাম ঘন্টাপুষ্প, এছাড়াও উগ্রগন্ধা, অরাম্ভক, বাতবৈরি নাম দেন।

প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে গাছপালার বিবরণ



Previous Post Next Post