Mbdjobs is a Bengali educational website for Students,bd jobs seeker.best jobs preparation website.

২১/০৩/২০২৩

ভারতে মুসলিমদের আগমন ও দাস বংশের ইতিহাস

 মুসলমানদের আগমন

ভারতবর্ষে দাস বংশের ইতিহাস  জানতে হলে ভারতের মুসলমানদের আগমন কিভাবে হলো তা জানা জরুরী। আমরা জানি ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ সাঃ। তার মৃত্যুর পরে আরব মুসলিম বণিক ও ধর্ম প্রচারকেরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। তেমনি ভারতবর্ষেও এসেছিলেন। জানা যায় মুলতান ও তামিলনাড়ু রাজ্যে প্রথম এসেছিলেন। শাসন করতে নয়। ধর্ম প্রচার ও ব্যবসা করতে। তবে মহাল্যিব নামে এক মুসলিম শাসক প্রাথম ভারত জয়ের জন্য আগমন করে।মুলতান পর্যন্ত এসে তিনি ফিরে যান।মোহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যুর ৩২ বছর পরের ঘটনা। তারও ৪৭ বছর পর মোহাম্মদ বিন কাশেম সিন্ধুনদের মুখে দেবল বন্দর  আগ্রমন করেন।  আরবদের একটি বানিজ্যিক জাহাজ জলদস্যুরা লুট করে।তখন দাহির নামে এক রাজপুত বংশের রাজা মুলতান ও সিন্ধুদেশ শাসন করতো। দাহির আরবদের ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করে।বিন কাশেম দাহিরকে শিক্ষা দিতে সৈন্য-সামন্ত নিয়ে সিন্ধুতে আসে।দাহিরের সৈন্য দেখে বিন কাশেম থেমে যায়।পরে অমিতবলে রাজা দাহির মোহাম্মদ বিন কাশেমের সাথে যুদ্ধ করে।দাহির জিতে যাওয়ার সকল সম্ভবনা ছিল।কিন্তু হঠাৎ করে একটা আগুনের গোলা এসে রাজা দাহিরের হাতিকে বিদ্ধ করে।হাতি রাজাকে নিয়ে দৌড়ে নদীতে পড়ে।সকল সৈন্য ভাবতে থাকলো রাজা দাহির পালিয়ে যাচ্ছে। সৈন্যরাও যে যার মত পালাতে লাগলো।দাহির ফিরে এসে দেখে তার  সৈনরা পালিয়ে গেছে।বিন কাশেমের বিজয় হয়।সে তিন বছর মুলতান ও পাঞ্জাব শাসন করে। পারস্য রাজাদের দ্বন্দ্বের বলি হলেন বিন কাশেম। তাকে বন্দী করা হয়।অনেক কষ্টে বিন কাশেম মারা যান।এর ২০০ বছর পরে  আলপ্তগীন নামে এক তুর্কী খোরসানে শাসন করতেন।তিনি ছিলেন রাজার ক্রীতদাস।রাজার মৃত্যুর পরে তার দল বল নিয়ে আলপ্তগীন গজনীতে এসে নতুন রাজ্য তৈরি করেন।আলপ্তগীনের মৃত্যুর পরে তার ক্রীতদাস ও জামাতা সবুক্তগীন রাজা হউন।সে সময়ে লাহোরে জয়পাল নামে এক রাজা শাসন করতেন।নতুন মুসলিম রাজ্য দেখে জয়পাল ভীত হউন।সবুক্তগীনের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন।কিন্তু যুদ্ধের দিন বৃষ্টি-ঝড় শুরু হওয়ার কারণে জয়পাল যুদ্ধে রাজি হয় নি। সবুক্তগীনকে  অনেক কিছু দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুদ্ধ ধামান। পরে জয়পাল তা দিতে অস্বীকার করেন ও সবুক্তগীনের  এক দূতকে বন্দী করেন।শুরু হয় যুদ্ধ। জয়পাল পরাজিত হয় যুদ্ধে।সবুক্তগীনের মৃত্যুর পর তার পুত্র মহমুদ রাজা হউন। মহমুদ গজনী সতেরবার ভারতবর্ষে আসেন। সোমানাথ, মথুরা,কোট,থানেশ্বর আক্রমণ করেন।মহমুদ ভারত জয় করতে চান নি।অর্থ সম্পদের জন্য আক্রমণ করতেন। মহমুদের পরে ১৫০ বছর আর কোন মুসলিম বাইরে থেকে ভারতে আসে নাই। আস্তে আস্তে মহমুদের তৈরি  গজনী শহর ধ্বংস হতে লাগলো। এরপর আসলে মোহাম্মদ ঘুরী।মোহাম্মদ ঘুরীর অরেক নাম শাহাবুদ্দীন। ঘুরী ছিলেন ঘোর নগরের রাজা গিয়াসউদ্দিনের ভাই। জয়চন্দ্র ও পৃথ্বীরাজের দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে ঘুরী  জয়চন্দ্রের কান্যকুব্জ ও পৃথ্বীরাজের রাজত্ব কেড়ে নিলেন। মোহাম্মদ ঘুরী দখলকৃত রাজত্ব  কুতুবউদ্দিন নামক এক শক্তিশালী ক্রীতদাসের হাতে সমস্ত রাজত্ব দিয়ে চলে গেলেন।





দাস বংশের সূচনা 

দাস বংশের রাজত্ব শুরু হয় কুতুবউদ্দিন আইবেক এর হাত ধরে।কারণ কুতুবউদ্দিন ও তার পূর্বপুরুষগণ দাস ছিলেন। কুতুবউদ্দিনের মৃত্যুর পরে রাজা হউন আরাম শাহ।আরাম শাহ রাজ্য শাসনে অযোগ্য ছিলেন।তারপরে রাজা হউন  আলতামাস। আলতামাস খুবই বুদ্ধিমান ও যোগ্য শাসক ছিলেন। আলতামাসের শাসনের সময় চেঙ্গিস খাঁ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ জয় করতে থাকলে পরাজিত রাজারা আলতামাসের কাছে আশ্রয় চান।রাজাদের আশ্রয় দিলে চেঙ্গিস খাঁ ভারত আক্রমণ করতে পারে এই ভয়ে তাদের আশ্রয় দেন নি।আলতামাসের পর রাজা হউন রোকনউদ্দীন।কিন্তু তিনি অযোগ্য ছিলেন। ফলে আলতামসের ভাগ্নি রাজিয়া সুলতানা শাসনভার গ্রহণ করেন।ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম কোন নারী শাসক হয়েছিলেন। তিনি সুন্দরী ও বুদ্ধিমতী ছিলেন।লোকে তাকে পছন্দ করতো।কিছুদিন পরে অশ্বশালার এক আবেসিনীয় ক্রীতদাসের প্রতি রাজিয়া বেশি গুরুত্ব দেয়াতে অনেকে অসন্তুষ্ট হউন।আলতুনিয়া নামে একজন ধনী লোক ক্রীতদাসকে হত্যা করে ও রাজিয়াকে বিয়ে করে।পরে তাদেরকে হত্যা করে শাসক হউন আলতামাসের পুত্র বাহরাম ও নাতি মাসঊদ।১২৩৯ থেকে ১২৪৬ সাল পর্যন্ত তারা শাসন করেন।এরপর আসেন আলতামাসের আরেক পুত্র নাসির উদ্দিন।নাসির উদ্দিন সাধারণ জীবন যাপন করতেন।সৎ ছিলেন।নাসিরুদ্দিন পরে দাস বংশের শাসক হউন গিয়াসউদ্দিন বলবান।গিয়াসউদ্দিন ক্রীতদাস ছিলেন। সম্রাট হওয়ার পরে তিনি নিষ্ঠুর ও অহংকারী হয়ে যান।গিয়াসউদ্দিনের পরে দিল্লির শাসক হউন তার পুত্র কায়কোবাদ। কায়কোবাদ একজন অযোগ্য রাজা ছিলেন।তার এক মন্ত্রীর প্ররোচনায় খারাপ কাজ করতেন।পরে যখন কায়কোবাদ বুঝতে পারলেন তখন তাকে হত্যা করলেন ও নিজেও মারা গেলেন। ১২০৬ থেকে ১২৮৮ পর্যন্ত অর্থাৎ কুতুবউদ্দিন থেকে কায়কোবাদ পর্যন্ত যারা দিল্লি শাসন করেছেন তারা সকলই দাস ছিলেন।তাই এ রাজত্বকালকে দাস বংশের রাজত্বকাল বলা হয়। 

আরো পড়ুন  

আর্যদের আগমন ও অত্যাচারের কাহিনী 


কুতুবউদ্দিন আইবেক (১২০৬-১২১১)